ভোট ঠেকাতে বিএনপির ডাকা হরতালের আগের রাতে রাজধানীর গোপীবাগে যাত্রীবাহী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ট্রেনের চারটি বগিতে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে চারজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস সূত্র।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদক জামশেদ নাজিম জানান, ট্রেনের ভেতর থেকে তিনজনের মরদেহ বের করে আনতে তিনি দেখেছেন। উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যারা।
ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল কর্মকর্তা জানান শাহজাহান শিকদার জানান, রাত ৯টা ৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস সাত ইউনিট। রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানা গেছে, বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর অল্প কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ কাঁচাবাজারের সামনে ট্রেনে দেয় দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনের কয়েকটি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পৌঁছাতে পারেননি। এলাকাবাসী যে যার মতো করে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
ঢাকা রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শ (এসআই) আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, রাত ৯টা ৭ মিনিটের দিকে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে তারা ট্রেনে আগুনের খবর পেয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা গেছেন।
২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে কোথাও-না কোথাও আগুনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে এক নারী ও তাঁর শিশু সন্তানসহ চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছিলেন, যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে আগুন দিয়েছিলেন দুর্বৃত্তরা।
গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুরে রেল লাইন কেটে ফেলায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। নিহত হন একজন। আহত হন ১০ জনের বেশি। তিন দিন পর ১৬ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। এতে ট্রেনটির দুটি বগি পুড়ে যায়। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্রেনটির আরেকটি বগি।
এছাড়াও গত ১৯ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী এলাকায় যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে এবং ২২ নভেম্বর সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা উপবন ট্রেনের একটি বগিতে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা।
নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির হরতাল অবরোধের মধ্যে গত দুই মাসে প্রায় তিনশ যানবাহন নাশকতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ট্রেনে আগুন দেওয়া এবং রেললাইন কেটে রাখার কয়েকটি ঘটনায় অন্তত পাঁচজনের প্রাণ গেছে।