বাসস: অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল। নানা প্রজাতির রং-বেরঙের পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত চরের নিঝুম প্রান্তর। বিশেষ করে ডুবোচরগুলোতে দেখা যায় দল বেঁধে পাখিদের খুঁনসুটি। কাদার মধ্যে খাবার সংগ্রহ, ডুব সাঁতার কিংবা পাখিদের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য যে কারো মন ভোলায়। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা দল বেঁধে মেতে উঠে জলকেলিতে। সুদূর সাইবেরিয়াসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা এসব অতিথি পাখি বছরের নভেম্বরের প্রথম দিকে আসতে শুরু করে এবং মার্চ পর্যন্ত অবস্থান নেয়।
এদিকে পাখি শিকারকে নিরুৎসাহিত করার জন্য স্থানীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা। একইসাথে পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জোরদার করা হয়েছে টহল ডিটটি। ফলে অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণে প্রকৃতিকে করেছে আরো প্রাণবন্ত। যে সব চর জোয়ারে ডুবে যায় ও ভাটার সময় জেগে উঠে এমন চরগুলোতে পাখিরা বেশি আসছে। কারণ কাঁদা-মাটিতে পাখিদের খাবার উপাদান থাকে।
সাধারণত এসব চরে জুলফি পানচিল, গাঙ্গচিল, সোনাজিরিয়া, উত্তরীয় লেঞ্জাহাঁস, কালোলেজ জৌরালি, ইউরেশিও গুলিন্দা, ধূসর মাথা টিটি, সিথি হাঁস, খুন্তে হাস, খয়রা চখাচোখি, ছোট পাকৌরী, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ঙ হাঁস, ধূসর বগা, পাতি হাঁস, কালো মাথা গাঙচিল, ছোট ধলাজিরিয়া, ছোট নর্থ জিরিয়া, গো বগা, মেটে রাজ হাঁস, পাতি বাটান, চেগা, পাতি চেগাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।
বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক এম এ মুহিত জানান, আমাদের উপকূলীয় এলাকার অতিথি পাখিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোলা। এখানে অনেক নির্জন চর রয়েছে, যাতে পাখিদের নিজস্বতা রক্ষা পায়। এ সময়ে সারাবিশে^ বিপন্ন এমন অনেক পাখি এ চরাঞ্চলে দেখা যায়। যেমন চামুচ ঠুটো বাটন, ইন্ডিয়ান স্কিমার, নার্ন সেভেলারসহ অনেক পাখি। প্রকৃতি ভালো রয়েছে বলেই পাখিরা আসছে। তাই পাখিরা যাতে বিরক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
জেলার সর্ব দক্ষিণের ঢালচর, মনপুরা চর, কলাতলীর চর, চর কুকরি মুকরি, চর শাহজালাল, চর শাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, চর পাতিলা, ডেগরারচরসহ মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উপকূলবর্তী মাঝের চর, চর চটকিমারা, মদনপুরা সহ বিভিন্ন চরে পাখিদের আনাগোনা বাড়ছে। শীতের সকালে গায়ে কুয়াশা মেখে পাখিরা উড়ছে আপন মনে। চারদিকে সাগর-নদী, চর আর সবুজ গহীন বনের দু’পাশে পাখিদের কিচির-মিচির মাতিয়ে রাখে সকাল-বিকেল। কান পাতলেই শোনা যায় পাখির ডাক।
চর কুকরী-মুকরীর চর-পাতিলায় দেশি-বিদেশি পাখি দেখার জন্য বন বিভাগের রয়েছে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকেই চরের অতিথি পাখি সহজেই দেখা যায়। চর পাতিলায় পাখি দেখতে আসা লিয়াকত হোসেন ও সুমন রহমান বলেন, ব্যস্ত ও শব্দের শহরের বাইরে এটা একটি ভিন্ন জগৎ। বিশেষ করে শীতের সময়ে এখানকার প্রধান আকর্ষণ অতিথি পাখি। তাই পাখি দেখছেন ও সুযোগ পেলে পাখির ছবি তুলছেন। অপর পর্যটক কবির হোসেন বলেন, শীতের সময় সুস্ক মৌসুম হওয়াতে ডুবো চরগুলো জেগে থাকে। সেই সাথে চলে চরে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। যা অপরুপ মায়ায় মন ভরে দেয়।
চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন বলেন, এবছর মৌসুমের শুরু থেকেই এখানে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। এ পাখি দেখার জন্য অনেক পর্যটক ভিড় করছেন কুকরিতে। চর কুকরি-মুকরির পাখি সংরক্ষণ ও বিচরণ নির্বিঘœ করতে লিফলেটসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, প্রতিবছরের মতন এবারো আমাদের চরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। এসব পাখিদের অবাস্থল যাতে কেউ বিনষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের বন কর্মীসহ সবাই সচেষ্ট রয়েছে। তবে আশার কথা হলো মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। তারা পখি শিকার থেকে নিজেদের বিরত রাখছে।
তিনি আরো বলেন, অতিথি পাখিরা না আসলে আমাদের প্রকৃতির সমস্যা হবে, এটা এখন মানুষ বুঝতে পারছে। এছাড়া পখি শিকার বন্ধ করতে লিফলেট বিতরণসহ অনান্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রতিটি রেঞ্জ থেকে আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে।