শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে ঢাকা মহানগর উত্তরের ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন।
জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এই গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগকারী এই নেতারা জাপার বর্তমান নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে নতুন করে দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
জাপা থেকে পদত্যাগকারী এই নেতারা ঢাকা মহানগর উত্তরের ৯টি থানা ও এর আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে রয়েছেন। থানাগুলো হচ্ছে- হাতিরঝিল, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, আদাবর, তেজগাঁও, পল্লবী, মিরপুর, রূপনগর ও বাড্ডা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন জাপার ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত জিএম কাদের এক বছর আগে থেকেই বলে আসছেন যে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। সেভাবেবা তিনি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এসেছেন।
‘সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলে নিজেকে বিরোধী নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেছেন। আমরাও তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের আগে আমরা বুঝতে পারলাম, তিনি গোপনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নিজের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ৩০০ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত করার পর মাত্র ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার বিনিময়ে গোটা পার্টিকেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। আর সমঝোতা করে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ মাত্র ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে এমপি হয়েছেন।
‘পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নেতা ও কর্মী-সমর্থকরা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আর চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিতার নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জি এম কাদের নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের ভাষা বুঝতে না পেরে প্রতিহিংসাবশত পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আরও কয়েকজন নেতাকে মৌখিকভাবে অব্যাহতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন।’
জাপা ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন,
‘জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিব এটাকে নিজের দল মনে করেন। তারা এটাকে মুদি দোকান মনে করেন। তারা সকালবেলা অফিসে আসেন, সন্ধ্যায় ফিরে যান। জিএম কাদেরের একটি ফোরাম আছে, ফাঁদ আছে। তার নির্ধারিত কিছু লোক সারা দিন দোকানদারি করে তাকে হিসাব দেন। হিসাব নিয়ে তিনি বাসায় ফিরে যান।
‘জাপাকে জিএম কাদের ধ্বংস করে ফেলেছেন। আমরা তার নেতৃত্বে দল করব না। আমরা পল্লীবন্ধু এরশাদের আদর্শ নিয়ে আগামীতে এগুবো।’
জিএম কাদেরকে উদ্দেশ করে সেন্টু বলেন, ‘এই দল করার যোগ্যতা আপনার নেই। আপনার পদত্যাগ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘জাপা চেয়ারম্যানের আশপাশে যারা আছেন তারা হলেন ঘুঘুর ফাঁদ। এই ফাঁদে তিনি পড়ে গেছেন। এই ফাঁদ থেকে তিনি বের হতে পারবেন না। জিএম কাদের জানেন না, উনি এখন লাটিমের মতো ঘুরছেন। আর এই লাটিমের সুতা মহাসচিবের হাতে।’
জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহীন আর সুলতানা রিমা, বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীসহ কয়েক শ’ নেতাকর্মী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।