রাজধানীর বেইলি রোড। থিয়েটারপ্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত নাম। সম্প্রতি এ স্পটের কদর বাড়ে ভোজনরসিকদের কাছেও। হরেকরকম খাবারের স্বাদ নিতে সকাল থেকে ভিড় দেখা যেত রোডের হোটেল-রেস্টুরেন্টে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) লিপ ইয়ার থাকায় তা স্মরণীয় করে রাখতে অনেকে হাজির হন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ লেগে যাওয়া আগুন পাল্টে দেয় সবকিছু।
প্রতিদিন যে রোডে থাকত আনন্দ আর উচ্ছ্বাস শুক্রবার সকালে সেই রোডে ছিল গুমোট পরিবেশ। পুড়ে যাওয়া ভবনটি একনজর দেখতে হাজির হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়াও এসেছেন ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা অনেকেই। সবার নজর ভবনটির দিকে। তাদের চোখে মুখে বিষাদের ছাপ। পোড়া গন্ধে ভারী বাতাস চিড়ে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস। এক গভীর নিস্তব্ধতা ভর করেছে রোডটিতে। ভবনের সামনের অংশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে ঘটনাস্থলে দেখা যায় বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দল ভবনে প্রবেশ করেছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে।
বেইলি রোডের সাত তলা ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, ইল্লিন, জেস্টি, খান দাবা, ইউকো, হাক্কা-ঢাক্কাসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট, স্যামসাং মোবাইলের শোরুম, কয়েকটি কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
স্থানীয় অনেকেই জানান, সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের এ অংশের খাবার দোকানগুলোয় বরাবরই ভিড় থাকে। গতকাল লিপ ইয়ার অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ থাকায় দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে সময় কাটাতে জড়ো হয়েছিলেন রেস্টুরেন্ট ও কাপড়ের শোরুমভরা ভবনটিতে। সে আনন্দ আয়োজন এক আগুনে পরিণত হয়েছে বিষাদপুরীতে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত। এরপর শুরু হয় ছোটাছুটি। চারদিকে হইচই পড়ে যায় শিখা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে। পথচারী আর আশপাশের দোকান ও ভবন থেকে মানুষ ভিড় করতে শুরু করে ভবনটি ঘিরে। নিচ থেকে আগুন ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকা মানুষের বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নিচ থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে সবাই ভিড় করে ছাদে। এর মধ্যেই ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের একের পর এক ইউনিট। এগুলোর কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। শুরুতে আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে আহত হন কয়েকজন। এর মধ্যেই নারী-শিশুসহ জীবিত ৭৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। ছাদে জড়ো হওয়াদের মধ্যে অচেতন অবস্থায় অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর তথ্য দেয় ফায়ার সার্ভিস।
প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরই আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর। প্রথমে তিনজন, এরপর তা বেড়ে ১১ এবং ২০ জনের খবর আসে হাসপাতাল থেকে। শেষমেশ ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।