নওগাঁয় মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও ‘প্রগেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি বিমা প্রতিষ্ঠান গ্রাহদের টাকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
জমা টাকা পেতে গ্রাহকরা দিনের পর দিন ওই অফিসে ধরনা দিতে হচ্ছে। ভবিষ্যতের জন্য জমা টাকা নিয়ে বিমা প্রতিষ্ঠানটি উধাও হয়ে যেতে পারে; এই আশঙ্কায় দিন পার করছেন গ্রাহকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে নওগাঁ শহরের হোটেলপট্টিতে আমিন মার্কেটের তৃতীয় তলায় প্রগেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অফিস যাত্রা শুরু করে। ভবিষ্যতের জন্য শত শত গ্রাহক এই প্রতিষ্ঠানটিতে টাকা সঞ্চয় বা জমা করেছিলেন। অনেকের বাৎসরিক মেয়াদ পুরণ হয়েছে আবার অনেকের এখনও মেয়াদ পূরণ হয়নি।
যাদের মেয়াদ পুরণ হয়েছে তারা তাদের সঞ্চয় টাকা নেয়ার জন্য অফিসে গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন। প্রতিদিনই গ্রাহকরা যাচ্ছেন, কিন্তু গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করা হচ্ছে। আজ নয়, কাল বলে সময় পার করছে অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে গ্রাহকদের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
জেলার রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামে কৃষক সাজেদুল ইসলাম ভবিষ্যতে সংসারে উন্নয়নের জন্য এ বিমাতে টাকা জমানো শুরু করেছিলেন। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর তার মেয়াদ পূর্ণ হয়। বিমাতে জমা টাকা পাওয়ার আশায় দিনের পর দিন অফিসে গিয়ে ধরনা দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী সাজেদুল ইসলাম বলেন, বছরে ১০ হাজার ৩৭৩ টাকা হিসেবে ১২ বছর মেয়াদি বিমা করেছি। যেখানে আমার প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার টাকার মতো জমা হয়েছে। মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে আরও প্রায় ১ বছর ৫ মাস আগে। মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অফিসে আসতে বলা হয়। তারপর থেকে অফিসে এসে জমা টাকা পেতে ধরনা দিতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এসে দেখি অফিস বন্ধ থাকে।
তিনি বলেন, অফিস থেকে বলা হচ্ছে আরও এক বছর পর আসার জন্য। নিজের জমা টাকা পেতে এতো ঘুরতে হবে কেন? ভবিষ্যতে সংসারে উন্নয়নের জন্য অনেক কষ্ট করে টাকাগুলো জমিয়েছি। এখন ভয় হচ্ছে যদি অফিস সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায় তাহলে কী হবে!
আরেক ভুক্তভোগী নওগাঁ শহরের চকদৌলত মধ্য সাহপাড়া মল্লার বাসীন্দা শাহাজান বাদশা। তিনি বলেন, মা সাজেদা বেগমের নামে বছরে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা হিসেবে ১২ বছরের জন্য বিমা করা আছে। মেয়াদ পুরণ হয়েছে ২০২৩ সালের মে মাসে। প্রায় ৫৫ হাজার টাকা জমা হয়েছে। জমা টাকা পাওয়ার জন্য ব্যাংকে হিসাব খুলতে বলা হয়েছিল। একটি ব্যাংকে হিসাব খুলে হিসাব নম্বরটি বিমা অফিসে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, আজ নয়, কাল বলে মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে। অফিস থেকে বলা হচ্ছে, টাকা নাই, এখন দেয়া যাবে না। আরও কিছুদিন পরে আসেন। আমাদের সাথে প্রতারণা করার কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। আমার মতো অনেক গ্রাহক এসে হয়রানি হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক রাহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সাল থেকে শহরের হোটেলপট্টিতে আমিন মার্কেটের তৃতীয় তলায় বিমার কার্যক্রম করা হচ্ছে। তবে তার আগে শহরের পার-নওগাঁয় অফিস দিয়ে সেখানে কার্যক্রম করা হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের আগে গ্রাহকদে টাকা দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে পরবর্তী সময় থেকে সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা উত্তরণে আমাদের সুযোগ দিতে হবে।
প্রগেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নওগাঁ সার্ভিসিং সেলের সহকারী পরিচালক (এএমডি) রহিদুল ইসলাম বলেন, এ অফিসের অধীনে পাঁচ শতাধিক গ্রাহক রয়েছেন। বর্তমানে কোম্পানি কোন ফান্ড (অর্থ) দিচ্ছে না। ফান্ড পেলে দ্রুত গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে অফিস পালিয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। করোনা ভাইরাসের পর থেকে প্রতিষ্ঠান অর্থনেতিকভাবে দুর্দিন যাচ্ছে এবং ভাল সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, যেসব গ্রাহকদের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে তাদের বিষয় অফিসকে অবগত করা হয়েছে। ফান্ড না পাওয়া পর্যন্ত পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।