ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (শুল্ক ও আবগারী) ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এতথ্য জানান।
মতিউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এই অনুসন্ধান দলের অপর দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান ও উপ সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার।
সংবাদ সম্মেলন দুদক সচিব বলেন, এনবিআরের সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গত ৪ জুন ২০২৪ তারিখে কমিশন একটি অনুসন্ধান টিমের মাধ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে একজন উপপরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের সদস্যগণ তাদের কাজও শুরু করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের ৪ জুনের সভায় সংস্থার মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে চার বার অনুসন্ধান করা হয়।
এনবিআরের এই কর্মকর্তার সন্তান পরিচয়ে মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে এক তরুণের ঈদুল আজহার সময় ১২ লাখ টাকায় ছাগল ও ৫২ লাখ টাকায় গরু কেনা ও গাড়িবিলাসের কথিত ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এই ইফাত তাঁর সন্তান নন। এমনকি তিনি এই তরুণকে চেনেনও না। তবে পরে জানা যায়, ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর দ্বিতীয় সন্তান।
দুদকের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা বলার জন্য আজকের পত্রিকা থেকে ফোন করা হলেও মতিউর রহমান ফোন ধরেননি। ফোনে মেসেজ পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে এই চারটি অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়। তবে এই চার দফা অনুসন্ধানের পর কমিশন থেমে যায়।
দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কমিশন ৪ জুনের সভায় এই রাজস্ব কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে এবার প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সভায় তাঁর বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি টিম গঠন করতে বলা হয়।
সভার গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়, একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে ২০০৪,২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে পরিসমাপ্তকৃত চারটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও তৎসংশ্লিষ্ট নথি খুঁজে বের করতে হবে। নথি খুঁজে না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বসুন্ধরা ডি ব্লকে একটি সাততলা বাড়ি, আই ব্লকে তার যৌথ মালকানাধীন ডেভেলপার কোম্পানীর জেসিক্সের তত্ত্বাবধানে একটি বহুতল ভবনে তার অংশ আছে।
এছাড়া মতিউর রহমানের মালিকানায় ময়মনসিংহের ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির উপর গ্লোবাল নামে জুতার একটি কারখানার, নরসিংদীদে একটি রিসোর্ট, পুবাইলে শুটিং স্পটসহ বিপুল সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। রাজস্ব বিভাগের এই কর্মকর্তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামেও নামে বেনামে সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে।