Sunday, April 20, 2025

সর্বশেষ

হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বড় হার, হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

কানপুর টেস্ট শেষে মনে হতে পারে, হারের ব্যাপারটি বাংলাদেশের জন্য অমোঘ নিয়তি হিসেবে লেখা হয়ে গিয়েছিল। না হলে এই ম্যাচ কেউ হারে নাকি! কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্তর দলের এই অমোঘ নিয়তি কে লিখলেন? দুই দিনেরও কম সময় খেলা হওয়া এই টেস্ট যারা দেখেছেন, তারা বলবেন; বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই নিজেদের এই হারের গল্প লিখেছেন। না, ইচ্ছাকৃত নয় ব্যাপারটি, দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে দলকে হারের পথে ঠেলে দিয়েছেন তারা।

কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিন খেলা হয় মাত্র ৩৫ ওভার। আগের রাতের বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয় দেরিতে, পরে আবারও কয়েক দফায় বৃষ্টি হানা দিলে দিনের খেলা পরিত্যক্ত হয়। বৃষ্টিতে পরের দুদিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। তৃতীয় দিন শেষে মনে হয়েছে, নিশ্চিত ড্রয়ের পথেই এগোচ্ছে এই ম্যাচ। কিন্তু ঘটনাবহুল চতুর্থ দিনে পাল্টে গেল দৃশ্যপট, জেগে উঠলো ভারতের জয়ের সম্ভাবনা।

শেষ পর্যন্ত ভারতের জয়ের সম্ভাবনাই বাস্তবে রূপ নিলো, ৭ উইকেটে হেরে গেল বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে আসা দলটিই ভারতের বিপক্ষে হলো হোয়াইটওয়াশ। প্রথম টেস্টে ২৮০ রানে হারা বাংলাদেশ সিরিজ হারলো ২-০ ব্যবধানে। মুমিনুল হকের সেঞ্চুরির পরও প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে টি-টোয়েন্টি মেজাজে রান তোলা ভারত রেকর্ডের মালা গেঁথে ৩৪.৪ ওভারে ২৮৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। এই ইনিংসে ৫২ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা।

পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে উল্টো পথে হেঁটেছে। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতাও ছাড়িয়ে এই ইনিংসে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এদিন মাত্র ৫৫ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ, ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯৫ রান। এই রান টপকাতে তাদের হাতে ছিল পুরো দুটি সেশন। কিন্তু সময় না নিয়ে ওয়ানডের গতিতে রান তুলে ঘরের মাঠের দলটি লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ১৭ ওভারেই।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দাপুটে শুরু করে ভারত, প্রথম দুই ওভারেই ১৮ রান তোলেন দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও রোহিত শর্মা। তৃতীয় ওভারেই অবশ্য উইকেট হারাতে হয় তাদের। এই ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের করা প্রথম বলে সুইপ করতে গিয়ে হাসান মাহমুদের বলে ধরা পড়েন ৭ বলে ৮ রান করা রোহিত। এক ওভারের ব্যবধানে শুভমান গিলকেও ফেরান মিরাজ। ৩৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপেই পড়ে ভারত।

যদিও মুহূর্তেই চাপ জয় করে দ্রুততার সঙ্গে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন আগের ইনিংসে ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করা জয়সওয়াল ও বিরাট কোহলি। শুরুর ধারা বজায় রেখে তারা ওয়ানডের মেজাজে রান তুলে যান, এই জুটিতে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় ভারত। বিশেষ করে জয়সওয়াল ছিলেন বেশি দাপুটে। ৪৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা বাঁহাতি তরুণ এই ওপেনার ৪৫ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৫১ রান করে তাইজুল ইসলামের বলে আউট হন। কোহলি ২৯ রানে ও ঋসভ পন্ত ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। মিরাজ ২টি ও তাইজুল একটি উইকেট নেন।

শেষ দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে ব্যাটিং করে এই ম্যাচটি বাঁচানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এদিন ৮ উইকেট হারে রেখে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিয়ে। পরিস্থিতি বিবেচেনা না করে অহেতুক শট খেলে নিজের উইকেট বিলিয়ে ফেরেন কয়েকজন ব্যাটসম্যান। হাফ সেঞ্চুরি করা সাদমান ইসলাম অনিকের পর মুশফিকুর রহিম কিছুটা লড়লেও তা যথেষ্ট হয়নি দলের জন্য।

বোলারদের নিয়ে চেষ্টা করা মুশফিক অবশ্য শেষ পর্যন্ত চরম হতাশ করেন। খালেদ আহমেদকে নিয়ে লড়াই করে যাওয়া ডানহাতি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান বেশিরভাগ সময়ে স্ট্রাইকে থাকতে চেয়েছেন, ওভারের শেষ বলে নিয়েছেন এক রান। সেই তিনিই ভারতের পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ বলে তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হন মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে। বিরতিতে যাওয়ার আগে শেষ বলে নিজের উইকেটটি বিলিয়ে দেন মুশফিক।

৬৩ বলে ৭টি চারে ৩৭ রান করেন তিনি। এর আগে উল্লেখ করার মতো রান করেন সাদমান, বাঁহাতি এই ওপেনার ১০১ বলে ১০টি চারে ৫০ রান করেন। ২৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে পঞ্চম দিনে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ কিছুক্ষণের মধ্যেই মুমিনুল হককে হারায়। আগের ইনিংসে অনেকগুলো সুইপ শট খেলা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আজ একই শটে লেগ স্লিপে ধরা পড়েন, ২ রান করে ফেরেন তিনি।

দলের দুঃসময়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন অধিনায়ক শান্তও। বলের লাইন-লেংথ না দেখে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ১৯ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এর আগে সাদমান-শান্তর জুটি থেকে আসে ৫৫ রান। ৯১ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এখান থেকে যে উইকেট বৃষ্টি শুরু হয়, তা আর থামেনি। ৯১ রানে ৪ উইকেট থেকে ৯৪ রানে ৭ উইকেট হারায় তারা। অল্প সময়ের ব্যবধানে ফিরে যান সাদমান, লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসান।

লিটন ১ রান করেন, সাকিব রানের খাতা খুলতে পারেননি। বোলার রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। মুশফিকের সঙ্গে যোগ দেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৯ রান করে থামেন। ভারতের তিন বোলার বুমরাহ, অশ্বিন ও জাদেজা মিলেই বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে দেন। এ তিন জনই ৩টি করে উইকেট নেন। বাকি উইকেটটি পান পেসার আকাশ দীপ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৩৩

ভারত প্রথম ইনিংস: ২৮৫/৯ ডিক্লে.

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৪৬

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭.২ ওভারে ৯৮/৩ (লক্ষ্য ৯৫) (জয়সওয়াল ৫১, কোহলি ২৯*; মিরাজ ২/৪৪, তাইজুল ১/৩৬)।

ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা: যশস্বী জয়সওয়াল

সিরিজ সেরা: রবিচন্দ্রন অশ্বিন

সিরিজ: ভারত ২-০ ব্যবধানে জয়ী

সর্বশেষ

নির্বাচিত

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.