রেহানা রাখি এখন টিকটক, ফেসবুক আর ইউটিউবে খুব পরিচিত, বিশেষ করে বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে, দেশে ও বিদেশে। কিন্তু তার ভাইরাল ভিডিও আর জনপ্রিয়তার পেছনে আছে অনেক সংগ্রাম, আশা আর কঠোর পরিশ্রমের গল্প। আজ তিনি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় টিকটক কনটেন্ট ক্রিয়েটর, তবে এখানে পৌঁছানো তার জন্য সহজ ছিল না।
টিকটকের আগে রেহানা রাখি ছিলেন বাংলাদেশের টেলিভিশনের পরিচিত মুখ। তিনি বেশ কিছু নাটক আর টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। দর্শকের কাছে তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন তার প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে কাজের সুযোগ কমতে থাকে। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন এই পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি, স্বপ্ন দেখেছেন ভালো কিছু করার।
২০১৮ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ফ্রান্সে পাড়ি জমাবেন। কিছু সময় পর অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা নতুন রূপ পেল। ২০১৯ সালে খুললেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল। কিছুদিনের মধ্যেই টিকটক জনপ্রিয় হতে শুরু করে, আর সেখানেই তিনি শুরু করলেন ভিডিও বানানো। নিজের অভিনয়ের দক্ষতা আর দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এমন কনটেন্ট বানাতে থাকলেন যা সত্যি আর মজার মনে হতো। ফ্যাশন, রান্না, দৈনন্দিন ভ্লগ, কমেডি—সবকিছুই ছিল তার ভিডিওতে।
তার টিকটকের বড় সাফল্য আসে যখন তিনি নিজের আঞ্চলিক ভাষা, নোয়াখালীর ভাষায় কনটেন্ট বানানো শুরু করেন। অনেকেই তখন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে, খারাপ মন্তব্য করেছে। কিন্তু রাখি কখনো লজ্জা পাননি। দর্শকেরা তার এই সরলতা আর সত্যবাদিতা আরও বেশি ভালোবাসতে শুরু করে, আর দ্রুত তার ফলোয়ার বাড়তে থাকে।
ভাইরাল ভিডিও তার জীবনই বদলে দিল। একা সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে শুরু করা কাজই হয়ে গেল তার ক্যারিয়ার। এখন টিকটকে তার কয়েক লাখ ফলোয়ার, আর তার ভিডিও মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ দেখে। অনেকেই মন্তব্য করে বলেন, তার ভিডিও দেখে তাদের দিনটা ভালো কেটে যায়।
এখন তার কনটেন্টের ধরন বেড়েছে। কখনো স্বামীকে নিয়ে ভিডিও বানান, কখনো অন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সাথে মিলে কাজ করেন। কমেডি, রান্নার ভিডিও, ট্রেন্ডিং চ্যালেঞ্জ এর সবই করেন তিনি। তার ভিডিওগুলো পরিবারে বসেও দেখার মতো।
রাখি’র কাছে টিকটক শুধু একটি অ্যাপ নয়; এটা তার নতুন পরিচয় গড়ার মঞ্চ। তার গল্প প্রমাণ করে দেয়, স্বপ্নের পথে চলতে সাহস থাকলে সবকিছু সম্ভব। নিজের মাটি আর নিজের সত্ত্বার সাথে থেকে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে সাফল্য একদিন আসবেই।