রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে মানিক মিয়া এভিনিউতে অবস্থিত রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে সংসদ সদস্যদের চলাচলের জন্য পাতাল সড়ক নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হারানোর শঙ্কায় মাঠে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। পাতাল সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে দু’দফায় তারা মানিক মিয়া এভিনিউতে মানববন্ধন করেছে। সবশেষ মঙ্গলবার সকালে স্কুলটির সামনের সড়কে নেমে আসে ছাত্র-ছাত্রীরা। স্কুলের জমিতে আন্ডারপাস নির্মাণের এই উদ্যোগে নাখোশ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরাও।
একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে জানান, বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাঠের জায়গায় কেন পাতাল সড়ক হবে। এমন উদ্যোগে বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসহ বার্ষিক সব ধরনের আয়োজন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টির প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যহানির আশঙ্কা রয়েছে।
একাধিক শিক্ষক বলেন. এটি শুধু স্কুলের খেলার মাঠ নয়, পাবলিক প্লেসও। স্কুল ছুটির পর এলাকার শিশুরাও এই মাঠে খেলাধুলা করতে আসে।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা ভুল ব্যাখ্যা জেনেছে। মাঠটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষক বলেন, ‘তিন-চারদিন আগে বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে মাঠের ভেতরে ৩০ ফুট আন্ডারপাসের কাজ করা হবে- এমনটা জানার পরপরই প্রতিবাদ শুরু করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
আমরা আন্ডারপাসের বিপক্ষে না। কিন্তু বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাঠে কেন আন্ডারপাস হবে?’
এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার কথাও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদ সদস্যদের বাসভবন ন্যাম ফ্ল্যাট থেকে সংসদ ভবনে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সংসদ সচিবালয়ের অনুরোধে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
তবে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে। তারা বলছেন, ‘সংসদ ভবন এলাকায় এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশি এটি লুই আই কানের নকশাবহির্ভূত এবং এতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সৌন্দর্যহানি ঘটবে। তাছাড়া সংসদ সদস্যরা গাড়ি রেখে হেঁটে এই আন্ডারপাস ব্যবহার করবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালের দিকে এখানে দু’টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে। কিন্তু লুই আই কানের নকশা ও সংসদ ভবনের সৌন্দর্যের বিষয়টি চিন্তা করে সে প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসা হয়।
রাজধানী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলের জমিটি সরকার ব্যবহার করতে চাইলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। হঠাৎ করে কোনো কিছু না জানিয়ে স্কুলের জমি কেউই ব্যবহার করতে পারে না। এ কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বাধার মুখে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলে আমার কাছে লিখিত কৈফিয়ত চেয়েছে সওজ। স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষে আমি সেই চিঠির জবাব প্রস্তত করছি।’