হলুদ রঙের নয়ন জুড়ানো সরিষার ক্ষেত। ফুলের মৌ মৌ গন্ধ, আর মৌমাছির গুঞ্জন। দূর থেকে মনে হয় যেন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হলুদ চাদরে ঢাকা ফসলের মাঠ।
এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে উত্তরবঙ্গের শস্যভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জে। জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে সরিষা ক্ষেতের হলুদ রঙের ফুল প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করছে।
এদিকে অন্য ফসলের চেয়ে ভালো দাম পাওয়ায় এবার সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। কুয়াশা উপেক্ষা করে ক্ষেত পরিচর্যা করছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে বুধবার জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৮৭ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। গত বারের চেয়ে এ বছর ২৩ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লাপাড়া উপজেলায় এবার সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ৬১১ হেক্টর।
কৃষি বিভাগ থেকে এক কেজি বীজ ও বিভিন্ন ধরনের ৩০ কেজি করে প্রণোদনা হিসেবে ৪১ হাজার ২০০ কৃষকে সার দেয়া হয়েছে। উন্নত মানের সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ বছর ৫৫ হাজার ৬১৬ লিটার সরিষার তেল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। ফলে দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি অনেকটা মিটবে বলে মনে করেন তারা।
কৃষকরা জানান, কম সময় ও স্বল্প খরচের বিপরীতে লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকেছেন তারা। প্রতি বছরই ভালো ফলনের আসায় সরিষার চাষের পরিমাণও বাড়ছে।
তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের সরিষা চাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করি। দামও ভালো পাওয়া যায়। এ বছর এক বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা তোলা শেষ হলে এ জমিতে বোরো ধান লাগানো হবে।’
সদর উপজেলার ছোনগাছা গ্রামের সরিষা চাষি আবদুল হাই বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে সরিষার আবাদ করি। গত বছর আট বিঘা জমিতে টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ করতাম। ফলন হতো প্রতি বিঘায় তিন-চার মণ, কিন্তু চার বছর ধরে উন্নত বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করে বিঘাপ্রতি সাত-আট মণ ফলন পাচ্ছি।’
উল্লাপাড়ার কয়ড়া গ্রামের কৃষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘জমি থেকে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় ও আবহাওয়া ভালো থাকায় আমি পাঁচ বিঘা সরিষার আবাদ করেছি। অনেক সুন্দর আবাদ হয়েছে, ভালো ফলন হবে আশা করছি।’
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে (হাল, বীজ, সার) খরচ হয় পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। এক বিঘা জমিতে সাত থেকে আট মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতি মণ দাম দাঁড়ায় তিন হাজার ২০০ টাকা। আবহাওয়া ভাল থাকলে সময় মতো সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন।
আদর্শ মৌ খামারের মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিন শতাধিক মৌ বাক্স বসানো হয়েছে। এতে প্রতি সপ্তাহে আট থেকে ১০ মণ মধু সংগ্রহ করা যায়। সরিষার ক্ষেতে মৌ বাক্স বসানোর কারণে সরিষার ফলনও বাড়ে। খাঁটি মধু কিনতে অনেকেই মাঠে আসছেন।
মৌ চাষি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা উন্নতমানের মধু পাইকারি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, তবে মধু সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায় না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় গত বারের চেয়ে এ বছর ২৩ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ হয়েছে। সরকারের ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরিষার চাষাবাদ বৃদ্ধি করতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।