গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি ইউনিয়ন বর্ণি ও গোপালপুর। এ দু’ ইউনিয়নের মাঝখানে পাঁচশ’ কৃষকের ১২শ’ বিঘা জমি নিচু ও জলাভূমি বেষ্টিত। ফলে বছরের অধিকাংশ সময় এসব জমি জলাবদ্ধ থাকতো।
প্রায় ২৫ বছর যাবৎ এখানে চাষাবাদ হয় না। এ বিলের পানি একটু শুকাতেই প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় হোগলা। তাই বিস্তীর্ণ এই জায়গাটি হোগলার বিল নামে পরিচিত। এ বিলের দু’পারে মাছের ঘেরে নৌকায় চলাচল করতে হতো। এসব আগাছা ও কচুরিপানা ঠেলে ঘেরে নৌকায় যাওয়া আসা করতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগতো। তাই বিলের মাঝে একটি রাস্তা নির্মাণের বহু বছরের দাবি ছিল দু’ ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজার বাসিন্দার। অবশেষে তাদের সেই দাবি পুরণ হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ওই বিলের মাঝখানে ১২ শ’ ৬৮ মিটার ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতেই বদলে গেছে অকেজো এলাকার চিত্র। বর্তমানে ওই রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে জমিতে আবাদ শুরু করেছে কৃষক । আশপাশে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। ওই জমি থেকে ৩ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন ফসল ফলানো হচ্ছে। যার বাজার দও আনুমানিক ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। রাস্তার কারণে বিলের জায়গার দাম বেড়েছে প্রায় ৪ গুন। এছাড়া এখানে আরো ১০ কোটি টাকা মূল্যের মাছ, মুরগি, সবজি, ফল, দুধ ও গরুর মাংস উৎপাদিত হচ্ছে।
বর্নি ইউনিয়নের কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, আগে আমাদের এই বিলে অনেক ধান হত। কিন্তু গত ২৫ বছর ধরে এই জমি পতিত হয়ে পড়েছিল। তাই এখানে কোন মানুষ আসত না। এখন রাস্তা হওয়াতে আমরা দু’ ইউনিয়নেই সহজে যাওয়া আসা করতে পারি । এখানে অনেক ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তৈরি হয়েছে। আর কৃষকেরা জমিতে ফের আবাদ শুরু করেছেন। এ রাস্তা নির্মিত হওয়ায় আমরা খুবই খুশি।
দক্ষিণ বর্নি গ্রামের মাছ চাষী মান্নান শেখ বলেন, বিলের ওপারে মিত্রডাঙ্গা গ্রামে আমার একটি মাছের ঘের রয়েছে। কচুরি ঠেলে সেই ঘেরে নৌকা নিয়ে আসা যাওয়া করতে হতো। এতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগতো ও খুবই পরিশ্রম হতো। উৎপাদিত মাছ সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারতাম না। এখন ঘেরে মোটর সাইকেল, বাই সাইকেল ও ভ্যানে করে যেতে পারি। মাছ ও কৃষি পণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারছি। এ রাস্তার জন্য আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
গোপালপুরের মিত্রডাঙ্গা গ্রামের গৌতম মন্ডল বলেন, এই একটি রাস্তাই আমাদের কপাল খুলে দিয়েছে । এখন আমরা জমিতে ও রাস্তার পাশ দিয়ে শাক-সবজি আবাদ করতে পারছি। ঘেরে মাছ চাষ করতে পারছি। ঘেরপাড়ে সবজি চাষ, মুরগি ও গরু, ছাগল পালন করছি। আর রাস্তা দিয়ে সহজেই ফসল বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছি। একটি রাস্তা আমাদের কয়েকটি গ্রামের মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করে দিয়েছে। সৃষ্টি করে দিয়েছে আয়ের সুযোগ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, গোপালপুর ও বর্নি ইউনিয়নের ১২শ’ বিঘা জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদী হিসেবে পড়েছিল। ৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। তাই তাদের দুঃখ লাঘবে কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমে মাটির রাস্তা করা হয়।
পরে এইচবিবি প্রকল্পের মাধ্যমে মাটির রাস্তা টেকসই করা হয়েছে। এতে মাত্র ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ রাস্তা নির্মিত হওয়ায় দুই ইউনিয়নের বিল বেষ্টিত এলাকার ১০ হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে।