দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নয়, জনগণের জয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার ভোট পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশিদের সঙ্গে মত বিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
গণভবনের এই মতবিনিময়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছে।
“এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিজয়টা হচ্ছে জনগণের বিজয়। এ বিজয়টা আমার বিজয় না।”
জনগণের সরকার গঠন করবার অধিকার ও ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।”
রোববারের ভোট দেখতে আসায় বিদেশিদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা।
“নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারটা আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত ও শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
‘ভোট নিয়ে এত আগ্রহ কখনো দেখিনি’
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের এই নির্বাচনে কৌতূহল ছিল ভোটার উপস্থিতি কেমন হয়।
ভোটের দিন দেখা যায়, যেসব আসনে শক্তিশারী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন, সেগুলোতে ভোটের হার তুলনামূলক বেশি, আর যেসব আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, সেগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানায়, যদিও বিএনপি ও সমমনারা ভোট ‘বর্জন করায়’ দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
ভোট পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশিরা এখন পর্যন্ত নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি। বরং তাদের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য এসেছে তাতে আওয়ামী লীগ বেশ আনন্দিতই।
শেখ হাসিনা মনে করেন, ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। তিনি বলেন, “আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আটবারই আমার নির্বাচন করা হয়ে গেছে। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখিনি।
“আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ অনেক আনন্দিত এবং নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, মতামত দিয়েছেন সেটা উপযোগী। সেই জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।”
‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করেছি’
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা। মানুষের যে ভোটের অধিকারটা অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থাকে সংস্কার করেছি।
“নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সবাইকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা- সেটাই লক্ষ্য ছিল।”
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটের হার বাড়াতে নিজ দলের নেতাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা না দিয়ে বরং উৎসাহ দিয়েছে। তাতে বহু আসনে ভোটের হার বেড়েছে।
নির্বাচনটাকে ‘ব্যতিক্রমী’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সাধারণত আমরা দলের প্রার্থী ঠিক করে দেই বা সব দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি, যার ইচ্ছামত দাঁড়াতে পারবে।”
বিএনপির ভোট বর্জন নিয়ে তিনি বলেন, “দলটি সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে তৈরি। তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেই জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হল জনগণের।”
নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
“গেজেটের পর শপথ হবে, এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে। সরকার গঠন হবে। এটাই সংবিধানিক প্রক্রিয়া, তা অনুসারী করতে চাচ্ছি।”
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম