জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও বহিরাগত এক যুবকের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (৪৫তম ব্যাচ) ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন।
মোস্তাফিজুর মীর মশাররফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক।
ওই নারীর কাছ থেকে জানা যায়, তাদের বাসা সাভারের আশুলিয়ার জিরানী এলাকায়। সে বাসায় ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। মোস্তাফিজের সঙ্গে মামুনের পূর্বপরিচয় ছিল। মাঝে মাঝে মামুন মীর মশাররফ হলে মোস্তাফিজের কাছে থাকতেন।
ওই নারীর স্বামীকে শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে আসেন মামুন। তিনি (ওই নারীর স্বামী) অভিযুক্ত মামুনকে জানান, তারা কিছু আসবাবপত্র কিনবেন। তখন মামুন ওই নারীর স্বামীকে বলেন, এক দোকানে তিনি কিছু টাকা পাবেন, কিন্তু দোকানদার টাকা দিচ্ছেন না। ওই দোকান থেকে যেন আসবাবপত্র কেনেন।
ওই নারীর স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে দোকানে যাবেন। তাই স্ত্রীকে ফোন করে জাহাঙ্গীরনগর আসতে বলেন এবং আসার সময় বাসা থেকে মামুনের জন্য কিছু কাপড় নিয়ে আসতে বলেন। কারণ মামুন কয়েক দিন ক্যাম্পাসে থাকবেন মোস্তাফিজের কাছে। এরপর অভিযুক্ত মোস্তাফিজ ও মামুন মিলে ওই নারীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন।
পরে কাপড় নিয়ে অভিযোগকারী নারী ক্যাম্পাসে এলে তার কাছ থেকে কাপড় নিয়ে কক্ষে রেখে আসতে যান মামুন। এরপর মামুন কক্ষ থেকে ফিরে এসে ওই নারীকে বলেন, তার স্বামী হলের অন্য ফটক (জঙ্গলের দিক) দিয়ে আসবেন। পরে তাকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন মোস্তাফিজ ও মামুন।
ওই নারী বলেন, ‘মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র বাসা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই।
‘এরপর মামুন আমার স্বামীকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসতে বলে। স্বামী চলে গেলে অভিযুক্তরা আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজুরও ছিল। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।’
প্রশাসন ও পুলিশের ভাষ্য
এ বিষয়ে জাবির মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, “ঘটনা শুনেছি। জানতে পেরেছি হলের ‘এ’ ব্লাকের ৩১৭ নং কক্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুরাদ হাসান থাকেন। সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনা জানতে পেরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে আসি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
‘ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব এবং রাষ্ট্রীয় বিধি অনুযায়ী অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য রাষ্ট্রকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাসিক বলেন, ‘ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তে আছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিক্ষোভ
ধর্ষণে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাত দুইটা থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ফটকের সামনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন।
সূত্র: নিউজবাংলা২৪