Monday, April 21, 2025

সর্বশেষ

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বেড়ে ৯৫

মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সশস্ত্র বিজিপি সদস্যের সংখ্যা পৌঁছেছে একশর কাছাকাছি।

কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার ভেতরে রোববার রাতেও ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। আতঙ্কে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের রাত কেটেছে নির্ঘুম।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম সোমবার সকালে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, তখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে গত কয়েকদিন ধরেই।

শনিবার রাতে বিদ্রোহীরা বিজিপির একটি ফাঁড়ি দখল করে নিলে রোববার সকালে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৪ সদস্য।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। রোববার মধ্যরাতে বিজিবির পক্ষ থেকে মোট ৬৮ জন বিজিপি সদস্যের অনুপ্রবেশের কথা জানানো হয়েছিল। সোমবার সকালে সেই সংখ্যা ৯৫ জনে পৌঁছেছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল রোববার রাতে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন এসেছেন আহত অবস্থায়। তাদের মধ্যে দুজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিজিপির যে দুই সদস্য চিকিৎসাধীন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিজিপির ওই দুই সদস্যের নাম – রি লি থাইন (২২) ও জা নি মং (৩০)।

বিজিবির হেফাজতে থাকা এই ৯৫ জনের বাইরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আরো কেউ বাংলাদেশে প্রবেশে করে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববারই বলেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে।

“মিয়ানমারে এই যুদ্ধ কত দিন চলবে আমরা জানি না। তবে বাংলাদেশ সীমান্ত ক্রস করে কাউকে আর আসতে দেওয়া হবে না।”

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বাজার সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার থেকে আসা সশস্ত্র লোকজন।
এদিকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ছয় সদস্যকে আহত অবস্থায় কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার খবর মিলছে। রোববার দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

আহতরা রাখাইন রাজ্যের বুচিডং, টাংগো এবং ম্রাউ এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ২৪, দুজনের ২৩, একজনের ২০ এবং বাকি একজনের ২২ বছর বলে জানা গেছে।

তবে পুলিশ তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়সার হামিদ কেবল বলেছেন, তিনি ‘খোঁজ-খবর’ নিচ্ছেন।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়েন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোববার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে সকাল থেকে গোলগুলির আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি।

তিনি বলেন, “এখানে আমাদের এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্ক রাতে ঘুমাতে পারেনি। সকালে এখন নতুন করে গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছি না। কিন্তু মানুষের আতঙ্ক কাটছে না।”

পালংখালীর ওপারের পরিস্থিতি আপাতত শান্ত থাকলেও বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে সোমবার সকালেও গুলির শব্দ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম।

থামথমে পরিস্থিতিতে তুমব্রু সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল একপ্রকার বন্ধই রয়েছে রোববার থেকে। সীমান্ত এলাকায় পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ি থেকেও বের হচ্ছেন না। সীমান্ত এলাকার কয়েকটি বাজারে দোকানপাট প্রায় বন্ধ দেখা গেছে। এরমধ্যেও যারা বাজারে আসছেন তারাও দ্রুত বাড়ি ফিরছেন।

কেন এই যুদ্ধ

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।

আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। যুদ্ধ শুরুর পর রোববার সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটল।

২০২২ সালের অগাস্টের শেষ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। অনেক মানুষ আতঙ্কে সীমান্ত ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এর প্রতিবাদ, নিন্দা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল ঢাকা।

সূত্র: বিডিনিউজ২৪

সর্বশেষ

নির্বাচিত

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.