জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর মুখ খুললেন তার মা তাহমিনা শবনম। জানালেন, অবন্তিকার এই মৃত্যুর নেপথ্যে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীসহ আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত।
মেয়ের এই আত্মহত্যার নেপথ্যে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ছেলেসহ নিজেকে শেষ করে দেয়ারও হুমকি দেন এই সন্তানহারা মা।
অবন্তিকার মৃত্যুর পর কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় শনিবার মধ্যরাতে কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের সামনে অনেক কথা তুলে ধরেন তাহমিনা শবনম। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ছিল অত্যন্ত উদ্যমী। আমার মেয়ে মেধাবী এটাই কি তার অপরাধ? সে তার সেশনে ফার্স্ট, এটাই কি তার অপরাধ? সে জিডি (জেনারেল ডিউটি) পাইলটে টিকেছে, এটাই কি তার অপরাধ?
‘আমি প্রক্টর, চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কোনো বিচার পাইনি। আমি বিচার না পেলে শেষ হয়ে যাব। আমার কিছুই নেই। নিজে শেষ হয়ে গেলে আর কিছুই থাকবে না।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অবন্তিকার মা বলেন, “মেয়েটা কিছুদিন আগে পুরান ঢাকার কলতাবাজারে ছিল। এখানে ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। ওরে ওখান থেকে বের করে দিয়েছে। ওই বাসার মেয়েরা তো জানার কথা না।
‘আমার মেয়ে এসে বলতেছে- মা ওরা তো আমাকে এইভাবে মেন্টাল টর্চার করতেছে। আমি পড়তে পারি না।’
“পরে আমি ওর সঙ্গে ঢাকায় গেলাম। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে ওর (অবন্তিকার) পরীক্ষা চলতেছে। মেয়ের পরীক্ষা যখন শেষ, আমি যেদিন চলে আসি মেয়েরা অবন্তিকাকে বলতেছে- ‘তোমার কি পরীক্ষা শেষ? নাকি পরীক্ষা শুরু হবে?’ তার মানে তাদেরকে ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে তাকে কীভাবে টর্চার করবে।”
তাহমিনা শবনম বলেন, ‘রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি তারপরে আঁখি, বন্যা, দ্বীন ইসলাম এ ঘটনার জন্য মূল দায়ী। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে আপনারা ছেলেদেরকে জিজ্ঞেস করেন তারা কেন এমন করছে। সে তো স্টুডেন্ট ভালো। ক্লাসের টপ লিস্টেড মেয়ে। তার সঙ্গে কেন এরকম করছে? বলে যে আপনার মেয়ে একটা মেসেজ দিয়েছে। ওই মেসেজটা কিসের?
‘মেসেজটা কিন্তু আমার কাছে আছে। এই মেসেজে কোনদিন কোনো জিডি হয় না। কোনো কিছুই হয় না। মানে, ও ওর সঙ্গে অ্যাফেয়ার করেছে, এই কথাগুলো। এই কথাগুলো দিয়া তো কখনও জিডি হয় না।’
মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগ, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী নানাভাবে তাকে উৎপীড়ন করত। এ নিয়ে তার মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশ করে।
কিন্তু সহকারী প্রক্টর ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন তিনি। তখন ওই ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আপত্তিকর মন্তব্য করত, হুমকি দিত। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।
কুমিল্লায় প্রতিবাদ সমাবেশ
এদিকে শনিবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর পূবালী চত্বরে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেন বাংলা সংস্কৃতি বলয়, বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরাম, রং-তুলি যুব ফাউন্ডেশন, আলো যুব মহিলা কল্যাণ সংস্থা, প্রত্যাবর্তন, তারুণ্যের বাংলাদেশ, নিরাপদ চালক চাই, দেশ কল্যাণ সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, ভিবিডি কুমিল্লা, নবাব ফয়জুন্নেসা ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা কলেজ থিয়েটার, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার, ইয়ুথ ফর পারপাস, কুমিল্লা সাইক্লিস্ট ফোরাম, জুনিয়র ফ্রেন্ডার্স ক্লাবের প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় অবন্তিকা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার ১০ মিনিট আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন তিনি।
সূত্র: নিউজবাংলা