Sunday, June 8, 2025

সর্বশেষ

মেট্রোরেল বুধবার থেকে রাত ৯টার পরও চলবে

পবিত্র রোজায় মেট্রোরেলের যাত্রী কমে গেছে। কর্তৃপক্ষের আশা, রোজার শেষ অর্ধে কেনাকাটার জন্য মানুষ বের হলে যাত্রী বাড়বে। ফলে ১৬ রোজা, অর্থাৎ আগামী বুধবার (২৭ মার্চ) থেকে রাত ৯টার পরও মেট্রোরেল চালু রাখার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৬তম রোজার দিন মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ৯টা ৪০ মিনিটে এবং উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ৯টা ২০ মিনিটে ছাড়বে। বাড়তি সময়ে ১২ মিনিট পরপর ট্রেন চলাচল করবে। এতে চলাচলরত ট্রেনের সংখ্যা ১০টি বাড়বে। এখন দিনে ১৮৪ বার ট্রেন চলে। তখন চলবে ১৯৪ বার। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন মেট্রোরেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলে দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী চলাচল করার সক্ষমতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি চার মিনিট পরপর ট্রেন চালাতে হবে। এর জন্য দরকারি ২৪ সেট মেট্রোরেল আছেও। আগামী জুনের মধ্যে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় মেট্রোরেল চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে যাত্রী আশানুরূপ না বাড়লে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় মেট্রোরেল চালানো যাবে কি না, এ নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় আছে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে মেট্রোরেল চলে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। পিক আওয়ারে (৭টা থেকে সাড়ে বেলা ১১টা এবং বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা) প্রতি ৮ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলাচল করে। আর বেলা ১১টা থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অফ পিক আওয়ারে ১২ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলাচল করে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, রোজা শুরুর আগের ১৫ দিন প্রতিদিন গড়ে পৌনে তিন লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে। কিন্তু রোজা শুরুর পর দিনে গড়ে ২ লাখ ৩৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে। মেট্রোরেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, রোজার শেষ অর্ধে যাত্রীর চাপ বাড়বে। এ ছাড়া চলাচলের সময় বাড়ানোর ফলে যাত্রীসংখ্যা আগের জায়গায় চলে যাবে বা এর চেয়েও বেশি হবে। আর ঈদের পর বাড়তি যাত্রী অব্যাহত থাকলে এপ্রিলেই দুই ট্রেনের মধ্যে চলাচলের যে সময় নির্ধারিত আছে, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করা তাদের লক্ষ্য। এ জন্য চালুর পর থেকেই যাত্রী চলাচলের ধরন নিয়ে তারা বিশ্লেষণ করছেন। প্রয়োজন অনুসারে দুই ট্রেনের সময় কমিয়ে আনছেন। তিনি বলেন, তাঁরা নিজেদের আয়ে চলছেন। সরকার থেকে কোনো ভর্তুকি নিচ্ছেন না। মেট্রোরেল পরিচালনা ও বিদ্যুতের খরচ ওঠানো গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রী না বাড়িয়ে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ালে লোকসান গুনতে হবে।

রোজায় বাড়তি ব্যবস্থাপনা
রোজা উপলক্ষে ইফতারের সময়ের আগে–পরে মেট্রোরেল ভ্রমণের সময় ২৫০ মিলিলিটার পরিমাণের পানির বোতল বহন করার অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে পানি পানের পর বোতল অবশ্যই নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে। যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। ট্রেনের ভেতর ও বাইরে পর্দায় (এলইডি স্ক্রিন) ইফতারের সময়সূচি প্রদর্শিত হচ্ছে।

রমজান মাসে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাসে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ‘পেইড জোনে’ অবস্থান করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। রমজান মাসে যাত্রীরা ক্লান্ত থাকবে। তাই তাদের কথা বিবেচনা করে পেইড জোনে কার্ড পাঞ্চ করে প্রবেশ করার পর থেকে ৭৫ মিনিট থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে। রোজার আগে তা ৬০ মিনিট ছিল।

মাঝেমধ্যে বিকল, ভোগান্তি
রোজার মধ্যে ১৯ মার্চ ইফতারের আগে মেট্রোরেলের চলাচল আধা ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এতে ইফতারের আগে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে। ওই দিন বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে মতিঝিল থেকে ছেড়ে আসা উত্তরাগামী ট্রেনটি বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনে এসে আটকে যায়। প্রায় আধা পর চালু করা হয়। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মেট্রোরেলের চলাচল এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এ দুটি ঘটনার পেছনে যাত্রীদের দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, যাত্রীরা দরজার মধ্যে দাঁড়ানোর কারণে দরজা বন্ধ করা যায়নি। এ জন্যে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের দরজা বন্ধের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনবার সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। তিনবারের চেষ্টায় দরজা বন্ধ করা না গেলে বা দরজা না খুললে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে দরজা লাগানো বা খোলার যন্ত্র নির্দিষ্ট স্থান থেকে এনে চালু করতে হয়। এতে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা লেগে যায়। এখন দরজা লাগানো বা খোলার ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র বিভিন্ন স্টেশনে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এর বাইরে বিদ্যুতের গোলযোগ, বিদ্যুতের লাইনে ফানুস পড়াসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময় মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়।

মেট্রোরেল প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দক্ষ জনবলের ঘাটতি থাকায় কখনো ত্রুটি দেখা দিলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। মূলত, সমস্যা চিহ্নিত করতে দেরি হয় এবং সমাধানেও সময় বেশি লাগছে। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে পৌনে দুই ঘণ্টা চলাচল বন্ধ রাখা হয়। যদিও মেট্রোরেল চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি সাবস্টেশনে দুটি ট্রান্সফরমার রয়েছে। একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং অন্যটি জরুরি প্রয়োজনে চালু হবে। অর্থাৎ কোথাও বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হবে না।

ডিএমটিসিএলের এমডি এম এন সিদ্দিক এই বিষয়ে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বেশির ভাগ চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে যাত্রীদের ভুলে। এ জন্যে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন তাঁরা।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ

নির্বাচিত

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.