কক্সবাজারে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১০ থেকে ১২ জন।
সোমবার( ২৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁওয়ের খোদাইবাড়ি এজি লুৎফুর কবির আদর্শ দাখিল মাদরাসা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মাইক্রোবাসে করে বাড়ি ফেরার পথে কক্সবাজারগামী শ্যামলী পরিবহন বাসের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে ঘটনাস্থলে দু’জন আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও তিনজন।
নিহতরা হলেন- বাহারছড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইলশা পুরাতন বাড়ি গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে আবু আহমেদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্বিম ইলশা গ্রামের মাহবুবুল আলমের স্ত্রী মাহমুদা বেগম, ডোংরা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী সায়রা খাতুন, খানখানাবাদ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুফিয়া ডোংরা গ্রামের গোলাম সোবহানের ছেলে দুলা মিয়া এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি মালুমঘাট হাইওয়ে থানাতে আছে।
নিহত ও আহত সকলের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। তারা গত ৮ দিন থেকে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
জানা গেছে, বাঁশখালীর বেশকিছু অসুস্থ রোগী চোখের সমস্যা নিয়ে গত ৮ দিন আগে শহরের বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। চিকিৎসা শেষে সোমবার তিনটি মাইক্রোবাসে গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী ফিরছিলেন। দুটি মাইক্রো চলে গেলেও একটা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ১৪ জন যাত্রীর মধ্যে ঘটনাস্থলে দু’জন মারা যায়। সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়। বাকীরা সবাই চিকিৎসাধীন। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ৫ জনের মৃত্যুর হয়েছে। এদের মধ্যে আরও দুই জনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চকরিয়া মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বরত ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও খোদাইবাড়ি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। তারা লাশ উদ্ধার ও দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িগুলো জব্দ করে মালুমঘাট হাইওয়ে থানায় নিয়ে এসেছেন। গাড়িটি পুলিশের হেফাজতে থাকলেও চালক পালিয়ে গেছেন বলে জানান তিনি।
ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভরঞ্জন চাকমা জানান, বেলা ১২ টার দিকে শ্যমলী পরিবহনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে দু’জন মারা যায়।
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসা সহায়ক কর্মকর্তা নেছার আহমদ জানান, বাঁশখালীর ২৬ জন রোগী চোখের চিকিৎসা শেষে সোমবার বেলা ১২টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। মাঝপথে ঈদগাঁ উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের চিকিৎসার খবরাখবর নিতে বায়তুশ শরফ হাসপাতালের লোকজন সদর হাসপাতালে গিয়েছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ঈদগাঁওতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজন নারী-পুরুষকে দুপুর ১টার পর হতে পৃথক সময়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হয়। এদের মাঝে এক নারী ও এক পুরুষ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হাসপাতালে আনার আগে মারা যান আরও একজন৷
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী ( ট্রাফিক) জানান, মাইক্রোবাসে ১৪ জন যাত্রী ছিল। চট্টগ্রামগামী শ্যমলী পরিবহন মাইক্রোবাসটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জন মারা যায়।
বাঁশখালী সমিতি কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আলী জানান, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা মৃতদের অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী পাঠিয়ে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, বিগত কিছুদিন আগে বাহারছড়া রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠি হয়। তাতে যাদের চোখে ছানি পড়েছে তাদের পৃথকভাবে ছানি অপারেশন ও চিকিৎসা করার জন্য বাঁশখালী থেকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শুক্রবার। তাদের চিকিৎসা শেষে সোমবার ফিরে আসার পথে এ দুঘর্টনা ঘটে বলে জানা যায়।