প্রকৌশলীদের জনবান্ধব প্রকল্পের পরিকল্পনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অহেতুক কোনো প্রকল্প পাস না করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর রমনায় শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম কনভেনশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার আন্তরিকভাবেই চায় উন্নয়নে গতিশীলতা আসুক। এ অনুষ্ঠানে প্রকৌশলীরা অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলো মার্ক করে নিয়ে যাচ্ছি আমি। উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব, ব্যয়সাশ্রয়ী। জনগণ কতটুকু লাভবান হবে, সেভাবেই প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
‘শুধু নির্মাণের জন্যই নির্মাণ করবেন, কিছু কমিশন আসবে, সেসব প্রকল্প গ্রহণ করবেন না। যদি দেখি অহেতুক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, তেমন প্রস্তাব আমি পাস করব না।’
ওই সময় একটি মহল সরকারের উন্নয়নকাজ প্রশ্নবিদ্ধের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তৃণমূল থেকে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং তৃণমূল থেকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এ সরকারের টার্গেট। আমাদের ছোট ভূখণ্ড, কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠী। কাজেই আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেটি মাথায় রেখেই দেশের জনগণ কতটুকু লাভবান হবে, তা ভেবেই প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আর উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী।
‘কীভাবে জ্বালানি উদ্ভাবন করতে পারি, কীভাবে আমরা স্বল্প খরচে উন্নয়নের কাজটা সচল রাখতে পারি, যোগাযোগ ব্যবস্থা কীভাবে আরও উন্নত করতে পারি, সেটা চিন্তা করেই প্রকল্প নিতে হবে।’
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রকৌশলীদের আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন। সামনে আরও আসছে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ। এ ক্ষেত্রে কীভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চাহিদা মেটাতে বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশের রাস্তা বানাতে এত ব্যয় হয় কেন। যারা এই প্রশ্ন তোলেন, তাদের মাটি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আমাদের দেশের মাটির যে ধরন, তাতে করে আগে মাটিকেই প্রস্তুত করতে হয় প্রকল্পের জন্য, যার কারণে ব্যয় বাড়ে।’
পুকুর ভরাটের প্রস্তাব নাকচ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৌশলীরা অনেক সময় পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রস্তাব-পরিকল্পনা করেন, এটা ঠিক না। এমন প্রস্তাব আমি নাকচ করে দিয়েছি। পাশপাশি হাওরেও আর মাটি ভরাট করে রাস্তা হবে না, যা নির্মাণ করা হবে, তা হবে ওপর দিয়ে, যাতে পানির প্রবাহ নষ্ট না হয়।’
বিরোধীদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘দেশের কিছু মানুষের কোনো কিছুই ভালো লাগে না; কিছু ভালো লাগে না গোষ্ঠী আছে। তারা বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এমন কোনো প্রকল্প নেই, তাদের অভিযোগের তালিকায় নেই।
‘তাদের অহেতুক সমালোচনার পরও যখন মানুষ এসবের সুবিধা পাচ্ছে, জানি না তারা লজ্জা পাচ্ছেন কি না।’
তিনি বলেন, ‘পরমাণু বিদ্যুৎ সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব। এসব আধুনিক প্রযুক্তি না নিয়ে আমরা সারা জীবনই পেছনে পড়ে থাকব? যারা সমালোচক, তারা গাড়িতে না উঠে, গরুর গাড়িতে উঠুন। প্লেনে কেন চড়ছেন? মেট্রোরেল নিয়ে অনেক অনেক সমালোচনা ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
‘সমালোচকরা মেট্রোতে উঠছেন কি না, টানেলে গেলেন কি না, এগুলো মনে হয়, একটু ছবি তুলে রাখা উচিত। তাদের সমালোচনা থেমে যাওয়ার নয়, আমার লক্ষ্য মানুষের জীবন কীভাবে উন্নয়ন করা হবে।’
তৃণমূলকেন্দ্রিক পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন হাতে কোনো পরিকল্পনা নিই, আপনারা জানেন যে, আমাদের, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল থেকে উন্নয়নটা করা। কারণ তৃণমূল থেকে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা। তৃণমূল থেকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। শিল্পায়নের সাথে সাথে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
‘কারণ আমাদের নিজস্ব বিশাল বাজার। সেই বাজার আমাদের সৃষ্টি হবে। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখেই আমাদের প্রত্যেকটা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করব। আমরা ই-গভর্ন্যান্স ইতোমধ্যেই চালু করেছি।
‘কাজেই আমাদের ই-গভর্ন্যান্স হবে, ই-ইকোনমি হবে। আমাদের জনশক্তি, তারাও দক্ষ জনশক্তি হবে। আমাদের সমাজব্যবস্থাটা, সেটা আমাদের স্মার্ট সমাজব্যবস্থা হবে। সেইভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’