Thursday, December 5, 2024

সর্বশেষ

নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক নয় বলা যাবে না, সবাইকে ভোট দেয়ার আহ্বান সিইসির

এবারের-নির্বাচনকে-অংশগ্রহণমূলক-নয়-বলা-যাবে-না-সিইসিসন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছবি: পিআইডি

নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য, অসততার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সিইসি বলেন, ‘কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এ বিষয়ক কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে।’
নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগত প্রশ্নে মত-বিরোধের কারণে এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তারপরও এবারের নির্বাচনকে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয়’ বলে আখ্যায়িত করতে নারাজ তিনি।

সিইসি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে সর্বজনীনতা প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। তারপরও ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। নির্বাচনে মোট ২৯৯ আসনে ১৯৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে ফলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না।’

রোববার সন্ধ্যায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হওয়া সিইসির এ ভাষণ জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে সম্প্রচার হয়।

‘সংবিধানে দেশের জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে’ সিইসি বলেন, ‘সেই মালিকানা প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সংসদ নির্বাচন। রাত পোহালে সেই নির্বাচন। ২২ মাস আগে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করে আগ্রহী সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সমাজ, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজ, সিনিয়র সাংবাদিক এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে একাধিকবার সংলাপ ও মতবিনিময় করেছি। তাদের মতামত শুনে, সুপারিশ জেনে আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি। নির্বাচনে অনাগ্রহী নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলকেও সংলাপে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমন্ত্রণে তারা সাড়া দেননি। তারপরও নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছি।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংসদের সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের সহায়তা নিয়ে এ আয়োজন সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

‘সরকার আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বারংবার। কমিশনও তার আয়ত্বে থাকা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে এবং সরকারের কাছ থেকে আবশ্যক সকল সহায়তা নিয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী ও ভোটারকে নির্বাচন-বিষয়ক বিধি-বিধান অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাকেও আইন ও বিধি- বিধান যথাযথভাবে অনুধাবন, প্রতিপালন ও প্রয়োগ করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন-বিষয়ক আইন ও বিধি-বিধান বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রের পারিপার্শ্বিক শৃঙ্খলাসহ প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচনি কর্মকর্তা এবং সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।’

নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য, অসততার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সিইসি বলেন, ‘কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এ বিষয়ক কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে।’

এ বিষয়ে জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল প্রকারের নির্বাচনি অনিয়ম-অনাচার প্রতিহত করার আহ্বান জানান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান।

নির্বাচনি সহিংসতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘নাশকতা ও সহিংসতা একেবারেই হচ্ছে না- তা বলা যাচ্ছে না। এসবের কারণে রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষ আহত ও নিহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিষয়টি সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে।

‘আমরা সবসময় বিশ্বাস করি আলাপ-আলোচনা ও গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় উপনীত হয়ে যেকোনো রাজনৈতিক সংকটের নিরসন সম্ভব।’

নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা সহিংস পন্থা পরিহার করে কেবল শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাবে- মর্মে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল। এতে জনমনে আস্থা সঞ্চারিত হয়। কিন্তু, ঘোষিত হরতাল অবরোধের মধ্যে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা দৃশ্যমান হচ্ছে। ট্রেন, যানবাহন, এমনকি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কারা দায়ী সেটি আমাদের বিবেচ্য নয়। তবে নাশকতা ও সহিংসতার কিছু সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।’

তারপরও সকল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূর করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে অবাধে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভোটারদের অনুরোধ জানান নির্বাচন কমিশনের কর্তা।

তিনি জানান, এবার দেশে মোট ভোটার প্রায় ১২ কোটি। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। মোট ২ লাখ ৬২ হাজার বুথে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৮ লাখ সরকারি কর্মচারী। এ ছাড়া প্রায় ৩০০০ নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ লক্ষাধিক সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।

এ সময় পূর্বের তুলনায় এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি জানান, এবার অনলাইন পদ্ধতিতে নমিনেশন দাখিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ব্যবস্থাটি আগামীতেও বহাল থাকবে। এ কার্যক্রমের সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে ভোটের দিন কেন্দ্র ও পোলিং সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণের সুবিধায় দুটি ডিজিটাল অ্যাপ চালু করেছে কমিশন। এতে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।

নির্বাচনে বিশুদ্ধতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সবশেষে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভোট আপনার। ভোট প্রদানে কারও হস্তক্ষেপ বা প্ররোচনায় প্রভাবিত হবেন না। কোনো রকম বাধার সম্মুখীন হলে অবিলম্বে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করবেন। প্রিসাইডিং অফিসার যেকোনো মূল্যে যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করে ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইনত দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বাধ্য। প্রিসাইডিং অফিসারকে সহায়তা করতে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিকটেই অবস্থান করবেন।’

সর্বশেষ

নির্বাচিত

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.