স্কুলের গণ্ডি পেরোতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসেছে ১১ শিক্ষাবোর্ডের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী।
সারাদেশের ৩ হাজার ৭০০ কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় একযোগে প্রথম পরীক্ষা শুরু হয়; যা চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত।
প্রথম দিন এসএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র, দাখিলে কোরআন মাজিদ ও তাজভিদ এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিলে (ভোকেশনাল) বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে।
কোভিড মহামারী এসএসসি পরীক্ষার সূচি এলোমেলো করে দিয়েছিল। তিন বছর পর মাধ্যমিক পরীক্ষা আবার ফেব্রুয়ারিতে ফিরল।
আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢুকে হলে বসতে হবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে। সেজন্য সকাল ৯টা থেকেই ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে আসতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকদের উপস্থিতিও।
মিরপুরের এমডিসি মডেল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগেই আসন তালিকা দেখে পরীক্ষা কক্ষে ঢুকে পড়ছে পরীক্ষার্থীরা।
এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা সুলতান মোল্লা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৌমিতা ইসলাম কেন্দ্রে প্রবেশের আগে বললেন, কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকলেও তার প্রস্তুতি ভালো।
“যতটা সম্ভব পড়েছি। তারপরও তো টেনশন হয়। পরীক্ষা ইনশাল্লাহ ভালো হবে।”
তার মা সুমী ইসলাম বলেন, তাড়াহুড়ো এড়াতেই আগেভাগে সন্তানকে নিয়ে কেন্দ্রে এসেছেন।
“এটা তো ওদের জীবনের প্রথম বড় একটা পরীক্ষা। প্রিপারেশন তো নিয়েছে, লিখে আসতে পারলেই হয়। সাড়ে ৯টার মধ্যে ঢুকতে বলেছিল। তখন তো ঠেলাধাক্কা হত। টেনশন হত। একটু আগেই ঢুকিয়ে দিলাম, যাতে করে সুস্থিরভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।”
সন্তানের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে জানিয়ে সুমী ইসলাম বলেন, “যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে, আশা করি ভালোভাবে পরীক্ষায় লিখতে পারবে।”
আরেক অভিভাবক ইলিয়াস হোসেন বলেন, “মেয়ে আধা ঘণ্টা আগেই ঢুকে গেছে। অপেক্ষা করতেছি যদি কোনো সমস্যা হয়। এমনিতে পরীক্ষার পরিবেশ ভালো।”
সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার নির্দেশনা থাকলেও এই কেন্দ্রে এক শিক্ষার্থীকে ৯টা ৫০ মিনিটে আসতে দেখা যায়। পরে তার নাম, রোল নম্বর লিখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
চলতি বছর ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে আবেদন করেছে।
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৮ জন, ছাত্রী ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩১৪ জন।
নয়টি সাধারণ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭২ জন, মানবিক বিভাগে ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪০ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৭ জন পরীক্ষায় বসবে।
এছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডে ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ জন ও কারিগরি বোর্ডে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে।
এ বছর বিদেশের ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী রয়েছে ৩৫২ জন।
এবার নয়টি সাধারণ বোর্ড ও কারিগরি বোর্ডের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১২ মার্চ। এই ১০ বোর্ডে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হবে ১৩ মার্চ। এর মধ্যে ২০ মার্চ পর্যন্ত এসএসসির ও ২১ মার্চ পর্যন্ত কারিগরির ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে।
আর মাদ্রাসা বোর্ডে দাখিল পরীক্ষা শেষ হবে ১৪ মার্চ। এ বোর্ডে ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে ১৬ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত।
পরীক্ষার্থীরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। কেন্দ্রসচিব ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল আনতে পারবে না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও গুজব ঠেকাতে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত এক মাস দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ সময় নজরদারি চালানো হবে।
এসএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা নিরসনে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে।
নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের মনোযোগের ব্যাঘাত যাতে না হয়, সেজন্য তিনি কোনো কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন না।
সূত্র: বিডিনিউজ২৪