দেশের অন্যতম প্রধান চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে ফের বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের চালের দাম। ধানের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গত দুই সপ্তাহে এ মোকামে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
তবে ধানের মূল্যবৃদ্ধির দাবি উড়িয়ে দিয়ে জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা বলেন, বাজার পর্যায়ে প্রতি মণ সরু ধান ১ হাজার ৩৫০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না।
গত দুই সপ্তাহে এখানকার খুচরা বাজারে সব ধরনের চাল কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। গেল ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এখানে খুচরা বাজারে মাঝারি মানের আটাশ চাল বিক্রি হয় ৪৮-৪৯ টাকা কেজি দরে। ৬২ টাকার মিনিকেট (সরু) চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। ৫৬ টাকায় বিক্রি হওয়া কাজললতা চাল এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড় খুচরা বাজার পৌর বাজারের কয়েকজন চাল বিক্রেতা জানান, বেশি দামে মোকাম থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। কদিন আগে কাজললতা চাল ৫৬ টাকায় বিক্রি করেছি, সেটা এখন ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তারা বলছেন, খাজানগর মোকামে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চালকলের মালিকরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে সব ধরনের ধানের দাম বাড়তি। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাদের চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান জানান, ডিসেম্বর মাস থেকে ধানের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সব ধরনের ধানের দাম মণপ্রতি ১৮০-২০০ টাকা বেড়েছে।
নভেম্বর মাসে সরু ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৪২০ টাকা মণ। বর্তমানে সেই ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬৮০ টাকায়। মাঝারি মানের ধানের দাম বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ টাকা মণ। এ কারণে চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে মোকামে। যদিও খুচরা বিক্রেতাদের দাবি চালের দাম কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বাড়িয়েছেন চালকলের মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলে খাজানগর মোকামের চালকলের মালিকরা ধানের মূল্যবৃদ্ধির খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে মিনিকেট চালের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির (আওয়ামীপন্থি) নেতারা ভিন্নধর্মী বক্তব্য দিচ্ছেন। সমিতির সভাপতি ও ফ্রেস এগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক জানান, বর্তমানে মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬১-৬২ টাকায়। আবার একই সমিতির সহসভাপতি আরশেদ আলী বলেন, বর্তমানে মিলগেটে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা কেজি দরে।
কুষ্টিয়া জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, মিলমালিকরা ধানের মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ধানের মূল্য সেভাবে বাড়েনি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ধানের মোকামে সরু ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। এক মণ ধানে ২৬ কেজি চাল হলে, প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম পড়ে প্রায় (উৎপাদন খরচ বাদে) ৫২ টাকা।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী শাপলা ট্রেডার্সের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গত ১৫ দিন ধরে বেশি দামে চাল বিক্রি করছি। মিল মালিকরা সব ধরনের চালে কেজিতে ৩-৪ টাকা বেশি নিচ্ছেন।’
জেলা খাদ্য অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ বড়জোর ৩-৪ টাকা পড়ে। সেই হিসেবে এক কেজি মিনিকেট চালের উৎপাদন খরচ সব মিলিয়ে পড়ে ৫৫-৫৬ টাকা। তবে এক মণ ধান থেকে ২৬ কেজি চাল ছাড়াও খুদ, পলিস, মাছি (কালো চাল), গুঁড়া পাওয়া যায়। এগুলো থেকে মিলমালিকরা বাড়তি একটা আয় করেন।
খাজানগর মোকামে অন্তত ৫০টি অটো রাইস মিল রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে একশ ট্রাকের বেশি চাল পাঠানো হয়। প্রতি ট্রাকে প্রায় ২০-২৫ টন চাল যায়। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে এই চাল থেকে কোটি কোটি টাকার বাড়তি মুনাফা তুলে নিচ্ছে এখানকার মিলমালিকদের সিন্ডিকেট।