রাইডশেয়ারিং অ্যাপ উবার “রাইড-হেইলিং: আ প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন’স ইকোনমিক অপারচুনিটি ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে রাইডশেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর ভূমিকার কথা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কর্মশক্তিতে আরও বেশি সংখ্যক নারীকে যুক্ত করতে এ সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বলা হয়েছে, নারীদের কর্মশক্তিতে যোগদান কিংবা আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য উচ্চ অবস্থানে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে রাইডশেয়ারিং সার্ভিসগুলো।
এতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, যাতায়াতের সুব্যবস্থার ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে ঢাকার নারী কর্মশক্তির হার বৃদ্ধি পেতে পারে ১৩ শতাংশের বেশি। রাইডশেয়ারিং সুবিধার ফলে প্রায় ৩ লাখ নারী ঢাকার কর্মশক্তিতে যোগ দেবেন এবং এই বৃদ্ধির ফলে ২০২৮ সালের মধ্যে ঢাকার অর্থনীতির আকার ১.৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) নুর মোহাম্মদ মজুমদার প্রতিবেদনটিকে বাংলাদেশে নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন।
উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল বলেন, “২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উবার। উবার এবং অন্যান্য রাইডশেয়ারিং সার্ভিসগুলোকে এই ‘জেন্ডার কমিউট গ্যাপ’ সমাধানে কাজ করতে দেখে আমি আনন্দিত।‘
অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর লিড ইকোনমিস্ট বালি কৌর সোধি বলেন, “বিশ্বজুড়ে অর্থ উপার্জনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণের হার এখনো তুলনামূলকভাবে কম। নারীদের শিক্ষা কিংবা যোগ্যতা যে পুরুষদের তুলনায় কম এমন কিন্তু নয়। মূল বিষয়টি হলো, বিশেষত উদীয়মান বাজারে নারীরা এখনো গৃহস্থালি ও সেবা প্রদানের কাজ বেশি করে থাকেন। এই প্রতিবেদনটি নারীদের কর্মশক্তিতে প্রবেশ বা কর্মজীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যাতায়াতের বাধা দূর করতে সহায়তার লক্ষ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য একটি প্রমাণ-ভিত্তিক নীতির সুপারিশ জোরদার করে।”
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে ঢাকায় মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত একটি জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। উবার এবং অক্সফোর্ড ইকোনমিকস উবার যাত্রীদের নিয়ে জরিপটি পরিচালনা করেছে।
প্রতিবেদনে উঠে আসে, প্রতি ৩ জনে ১ জনের বেশি নারী যাত্রী রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের সহজলভ্যতার কারণে কর্মশক্তিতে যোগ দিতে পেরেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় অর্ধেক নারী বলেছেন, রাইডশেয়ারিং সার্ভিস তাদের কাজ ও পরিবারের মধ্যে সময়ের সুষম বণ্টনে সাহায্য করে। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নিজের সুবিধামতো ব্যবস্থা করে নিতেও সাহায্য করে। রাইডশেয়ারিং ব্যবহারকারী ১০ জনের প্রায় ৯ জন (৮৯ শতাংশ) বলেছেন, অন্যান্য যাতায়াতব্যবস্থার চেয়ে নিরাপদ হওয়ার কারণেই তারা রাইডশেয়ারিং বেছে নিয়েছেন। আর ১০ জনের প্রায় ৩ জন কর্মজীবী নারী যাত্রী একমত হয়েছেন, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের সহজলভ্যতার কারণে তাদের জন্য নিজেদের উপযুক্ত কাজের সুযোগ গ্রহণ করা সহজ হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নারীদের কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণের পরিমাণ কম। ২০২২ সালে পৃথিবীতে নারীদের কর্মশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ছিল ৪৭ শতাংশ, যা বাংলাদেশে ছিল ৪৩ শতাংশ। প্রতিবেদনটি অনুসারে, নারীর যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুটি চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপদ যানবাহনের স্বল্পতা এবং কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে বর্তমান ভারসাম্যহীনতা।