কয়েক বছর ধরে মন্থর গতিতে আসা প্রবাসী আয়ে কিছুটা হলেও গতি এসেছে মে মাসে। বেড়েছে রেমিট্যান্স। পাশাপাশি ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এমটিতেই বেশি অঙ্কের রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল। সব মিলিয়ে সদ্যসমাপ্ত মে মাসটিতে আসা প্রবাসী আয় ছিল গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে জনশক্তি রপ্তানির অনুপাতে এ অঙ্ক যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদেশে অবস্থানকারী জনশক্তির সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ। এসব জনশক্তি প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ৩০ হাজার টাকা করে পাঠানোর কথা। সে হিসাবে প্রতি মাসে দেশে রেমিট্যান্স হওয়ার কথা ৩৩৩ কোটি ডলার। অথচ গত মাসে এক ধাপে ডলারের দর ৭ টাকা বাড়ার পরও ঈদের আগের মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২২৫ কোটি ডলার। যদিও আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে প্রবাসী আয় ২২৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। আগের মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৪ কোটি ডলার। সে হিসেবে মা’র ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছরে একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে এ হিসাব প্রায় চার বছরের (৪৮ মাস) মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এযাবৎকালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, চলতি জুনে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রবাসীরা পরিবারের কোরবানির প্রস্তুতি হিসেবে এ মাসে রেমিট্যান্স বেশি পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয় বাড়তে পারে। আর ঈদের মাস হিসেবে জুনেও রেমিট্যান্স বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
এর আগে ৮ মে ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করে। এ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এ দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, মধ্যবর্তী এ দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। ফলে ব্যাংকগুলো এখন বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১১৮ টাকা ৩০ পয়সা দরে রেমিট্যান্স কিনছে। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ সরকারি প্রণোদনাসহ প্রবাসীর সুবিধাভোগীরা পাচ্ছেন ১২০ টাকার মতো। আগে ১১০ টাকা দর নির্ধারিত থাকলেও ব্যাংকগুলো ১১৩-১১৫ টাকায় কিনত।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন২ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৭ জন। আর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য গেছে। কিন্তু সে অনুপাতে দেশের প্রবাসী আয় বাড়েনি। বর্তমানে সব মিলিয়ে দেশের বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখ ২ হাজার ৩৬০ জন। যদিও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মনে করে বিদেশের মাটিতে প্রবাসী বাংলাদেশির পরিমাণ ১ কোটি ৩০ লাখ। সে হিসেবে মে মাসে একজন প্রবাসী গড়ে টাকা পাঠিয়েছে ২০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অথচ অর্থের পরিমাণ গড়ে ৩০ হাজারের বেশি হওয়ার কথা।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে বিভিন্ন ঝামেলা ও বেশি লাভের আসায় প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা পাঠান। এ ক্ষেত্রে হুন্ডি এজেন্ট গ্রাহকের বাড়ি টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না দেশের বিদেশি মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিদেশের মাটিতে বর্তমানে যে পরিমাণ প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন, সে পরিমাণে রেমিট্যান্স আসছে না। হুন্ডি ও অর্থ পাচার যদি ছয় মাসের জন্য বন্ধ করা যায় তাহলে দেশের ডলার সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।