বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়েছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। আবু সাঈদের মৃত্যু পাল্টে দেয় তাঁর মনোজগৎ। সেদিনই সিদ্ধান্ত নেন, ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় নামতে হবে। এই আন্দোলনে পরিচালক, শিল্পী, কলাকুশলীদের সঙ্গে রাস্তায় ছিলেন বাঁধন। কখনো ফার্মগেট, কখনো শাহবাগ, কখনো শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিছিলে মিছিলে দেখা গেছে তাঁকে। অবশ্য এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন, এমনকি হত্যার হুমকি পর্যন্ত পেয়েছেন অভিনেত্রী।
গত শুক্রবার দুপুরে দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মুঠোফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন বাঁধন। আলাপের শুরুতেই জানালেন ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হওয়ায় কীভাবে হুমকি পেয়েছেন তিনি।
আমি খুবই আশাবাদী। বিশ্বাস করেছি ছাত্রদের রূপরেখার ওপর। তবে আমি একজন বাঁধন হিসেবে কী চাই? আমি চাই নারীবান্ধব, বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যেখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি থাকবে না, সুশাসন থাকবে, স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার থাকবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আজমেরী হক বাঁধন
বাঁধন বলেন, ‘আমি যেদিন থেকে ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে মাঠে নামি, ওই দিন থেকেই আমাকে ফোনে, খুদে বার্তায়, ফেসবুকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। অ্যাসিডও মারতে চেয়েছে। আমি ভয় পাইনি। কারণ, একসঙ্গে আন্দোলনের দিনগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের চোখে-মুখে যে আগুন দেখেছি, আমি নিজেই তাদের কাছ থেকে সাহস সঞ্চার করেছি।’
তবে বাঁধনকে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছে কয়েকজন সহশিল্পীর আচরণ। তিনি বলেন, ‘বলতেও খুব খারাপ লাগে, সহশিল্পীদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে আমার কাজও হয়েছে, তাঁরা ছাত্রদের পক্ষে মাঠে তো ছিলেনই না, উল্টো আমাকে ভয় দেখিয়েছেন, ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছেন। তাঁদের এমন কাজে কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে তাঁদের প্রতি আমার এখন কোনো বিদ্বেষ নাই। প্রতিহিংসা মানুষ, দেশকে পিছিয়ে দেয়।’
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের অনেক জায়গাতেই নৈরাজ্য দেখা দেয়। এ প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। এক দল আছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, জ্বালাও-পোড়াও নিয়ে, আরেক দল আছে সম্পত্তি লুট করতে। এমন অন্যায়কে আমি সমর্থন করি না। এখন ছাত্ররা যে পথ দেখাল আমাদের, সে পথে ধরে দেশ গড়ায় ফিরতে হবে সবাইকে। এসব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করুন।’
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন দেশে নতুন সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা বাঁধনের। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমি খুবই আশাবাদী। বিশ্বাস করেছি ছাত্রদের রূপরেখার ওপর। তবে আমি একজন বাঁধন হিসেবে কী চাই? আমি চাই নারীবান্ধব, বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যেখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি থাকবে না, সুশাসন থাকবে, স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার থাকবে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
পরিবর্তনের ডাক দিয়ে অভিনেত্রী আরও বললেন, ‘সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে আইনের অনেক কিছুরই পরিবর্তন করতে হবে। তা এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ কতটুকু করতে পারবে, জানি না। এ সরকারের কাছে চাওয়া একটা, গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্র যেন পাই। যে দেশে সবাই হবে বাংলাদেশি। সব ধর্মের মানুষগুলোই সমানভাবে সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে। রাষ্ট্রকাঠামোতে যেসব জায়গায় পচন ধরেছে, সেগুলো এই সরকার সংস্কার করবে বলে প্রত্যাশা করি। এই অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তাঁরা সৎ মানুষ। আমি নিশ্চিত, তাঁরা পারবেন। আরও আশাবাদী, আমাদের দুজন ছাত্র এই উপদেষ্টামণ্ডলীতে আছেন।’
আলাপে আলাপে বাঁধন জানালেন, গত কিছুদিন আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে; সব মিলিয়ে তিনি ক্লান্ত। নতুন সময়ে নতুন করে কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাঁধন বলেন, ‘২৫ আগস্ট থেকে একটি নতুন ছবির শুটিং শুরুর কথা ছিল। এই পরিস্থিতিতে হয়তো হবে না। আগামী মাসে শুরু হতে পারে। আরেকটি ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ হচ্ছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে কাজ শুরু হবে। তা ছাড়া “এশা মার্ডার”-এর তিন-চার দিনের কাজ বাকি। জানি না কবে শুরু হবে। এই সিনেমার টিমটা অতটা গোছাল না। তাঁদের কাজে আমি খুব একটা সন্তুষ্ট না।’
প্রথম আলো