ধূমপান ও তামাক আইন সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করেছে অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টরা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) সংশোধনের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংশোধনীর খসড়ায় ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধসহ বেশ কয়েকটি কঠোর সিদ্ধান্ত রাখা আছে। অভিযোগ উঠেছে, অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা না করেই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে ‘আইন সংশোধনে বৈষম্য নয়, অংশীদারিত্ব চাই’ প্রতিপাদ্যে মানববন্ধন কর্মসূচি করেন ভেপ ব্যবহারকারীদের সংগঠন ভয়েস অব ভেপারস, কনজুমার রাইটস অব সেলস অলটারনেটিভস (কোরসা) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা)। এসময় সংগঠন তিনটির পক্ষ্য থেকে নোমান বিন খালিকি, নাইজুর রহমান, ইফতেখায়রুল আলম, নাহিদুল ইসলাম নোবেল, একেএম পারভেজসহ ভোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একই দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগরীতেও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এসব সংগঠন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘তামাক ও ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি। তবে তা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। খাতসংশ্লিষ্ট ও অংশীজনদের বাদ দিয়ে আইনের সংশোধনের বিষয়টি বৈষম্যমূলক।’
বক্তারা জানান, ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি নিশ্চিত করেছে যে ভেপিং ধূমপানের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং সুইডেন জনস্বাস্থ্য নীতির অংশ হিসেবে এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। সুইডেনে ধূমপানের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এর প্রধান কারণ, দেশটির নীতি তামাক ক্ষতিহ্রাসকারী পণ্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
মানববন্ধনে বক্তারা জানান, অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে কেবল এনজিওদের পরামর্শে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশোধনীর খসড়াটি তৈরি করে। ২০২২ সালে তা অনলাইনে উন্মুক্ত করে মতামত দেওয়ার জন্য স্বল্প সময় বেঁধে দেওয়া হয়। যা ছিল স্রেফ একটি প্রহসন। অংশীজনদের মতামতের অভাব থাকায় ও অধিকতর যাচাই বাছাইয়ের জন্য গত বছর (২০২৩) মন্ত্রিসভা থেকে ফেরত পাঠানো হয় খসড়াটি।
আওয়ামী লীগের আমলের প্রহসনের ও বৈষম্যমূলক সেই খসড়াটি আমলে নিয়েছে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও। এবারও অংশীজনদের উপেক্ষার বিষয়টি বিস্ময়কর!
বক্তারা বলেন, ‘এ ব্যবসার সাথে অনেক মানুষ জড়িত। পাশাপাশি ৫ লাখ ব্যবহারকারী আছেন, যারা ভেপিং এর মাধ্যমে ধূমপান ছেড়েছেন। সংশোধনীর মাধ্যমে করা উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এসব মানুষ। অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করলে বিষয়টির একটি সুরাহা করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। ছাত্র-জনতার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার নিয়ে এ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা মনে করি এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকার আমাদের কথা শুনবেন।
সংগঠনটিগুলোর দাবি, আইনটি সংশোধনে অদূরদর্শী ও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বরং তা যেন সরকারের জনস্বাস্থ্য লক্ষ্য ও রাজস্ব অর্জনের প্রয়াসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করতে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ প্রয়োজন।
চট্টগ্রামেও কর্মসূচি
চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় একই দাবিতে মানববন্ধন করে ওই তিন সংগঠন। সকালে অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচিতে আইনটির খসড়া নিয়ে অংশীজন ও খাতসংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনার দাবি জানান বক্তারা। এ সময় বেন্ডস্টার প্রতিনিধি আজহার রাব্বি চৌধুরী ইভান, কোরসার প্রতিনিধি মো. কামরুজ্জামানসহ ভোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।