Monday, December 29, 2025

সর্বশেষ

‘জানুয়ারিতে সাংবাদিকদের মহাসম্মেলন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন’

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের ওপর হামলাকারীদের বিচার ও সংবাদমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব। সংগঠনের সভাপতি এ কে আজাদ জানিয়েছেন, আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকায় একটি মহাসম্মেলন করা হবে এবং সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সের কবলে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।

সভায় এ কে আজাদ বলেন, ‘এখানে যারাই কথা বলেছেন, সবার কথায় একটি বিষয়ই উঠে এসেছে: আমাদের এই অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে।’

প্রথম আলোতে হামলার ঘটনার পর দ্য ডেইলি স্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে নোয়াব সভাপতি বলেন, মাহফুজ আনাম সরকারের এমন কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি নেই, যাকে ফোন করে নিরাপত্তা চাননি। কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য পাননি। যখন সাহায্য এসেছিল, ততোক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের বরাত দিয়ে এ কে আজাদ বলেন, ‘সেখানে সব বাহিনী উপস্থিত ছিল, কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি।’

সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ের ওপর হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এখন রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। কেবল মানববন্ধন বা সংহতি প্রকাশ নয়, এই অপশক্তিকে রুখে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে বাংলাদেশ দেখছি, এই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমি কোনো দিন দেখিনি। এটা অত্যন্ত পরিষ্কার, আজ ডেইলি স্টার বা প্রথম আলো নয়, আঘাত এসেছে গণতন্ত্রের ওপর। আমার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার যে অধিকার, কথা বলার যে অধিকার, তার ওপর আঘাত এসেছে।’

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জুলাই যুদ্ধ ছিল এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজ সেই জায়গায় আঘাত করা হচ্ছে। তাই কোনো রাজনৈতিক চিন্তা, দল বা সংগঠন নয়; গণতান্ত্রিকভাবে মানুষের এখন এক হওয়ার সময় এসেছে।

হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের ২৬-২৭ জন সহকর্মী ছাদে আটকে পড়েছিলেন। অথচ ফায়ার ব্রিগেডকে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারা শুধু ভবন পুড়িয়ে দিতে আসেনি, তারা সাংবাদিকদের হত্যা করতে চেয়েছিল। মতপ্রকাশ তো অনেক পরের বিষয়, এখন বিষয়টি বেঁচে থাকার অধিকারের প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে।’

হামলার সময় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানান নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর কেন্দ্রস্থলে মবতন্ত্র শুরু হয়েছে, যা সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বিকশিত হয়েছে।’ যারা এখন ক্ষমতায় আছে, তারা মবতন্ত্রের পেছনের শক্তিকে তাদের ক্ষমতাকাঠামোর স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। হামলার সময় সরকারের ‘রহস্যজনক নীরবতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন—জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনী আসলে কী করছে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী সময়ে যে বাংলাদেশের প্রত্যাশা করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি সেদিকে যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও স্লোগান ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমে হামলা চালানো কোনো সাধারণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত অপরাধ।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি জুলাই অভ্যুত্থানকে ছোট করতে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা ‘মবোক্রেসি’ শব্দগুলো ব্যবহার করত বলে আগে আমি এর সঙ্গে একমত ছিলাম না। কিন্তু বর্তমানে যা ঘটছে, তাকে মব ভায়োলেন্স বলা যায় না; এটি সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত অপরাধ। এর উদ্দেশ্য দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করা।’ তিনি অভিযোগ করেন, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালিয়েছে। হা

মলার রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারায় নিজের অসহায়ত্বের কথাও জানান তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা-সংস্কৃতি সবকিছুর ওপর আঘাত এসেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘ছায়ানট কেন ভাঙচুর হলো? ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কেন আক্রমণ আসছে?’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি হামলার ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্লোগান ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমে হামলা চরম দুর্ভাগ্যজনক। সরকারের এই নীরবতা তাদের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

সর্বশেষ

নির্বাচিত

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.