Tuesday, April 15, 2025

সর্বশেষ

কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা

উত্তর ভারতে হিন্দুদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালের সূত্র বিবিসিকে এই তথ্য জানিয়েছে।

তবে হতাহতের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন তথ্য জানানো হয়নি।

প্রয়াগরাজ শহরের নদীর তীরে ঘুমিয়ে থাকা মানুষদেরকে স্নান করতে যাওয়া অন্য মানুষেরা পদদলিত করার কারণে এমনটা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

জরুরি পরিষেবা দানকারীদেরকে স্ট্রেচারে করে মৃতদেহের মতো কিছু নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

বিবিসি সংবাদদাতারা জানিয়েছেন যে নদীগুলোর মিলনস্থলের কাছাকাছি এলাকায় হুড়োহুড়ির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় কতজন আহত বা নিহত হয়েছে, সেই সংখ্যা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও এখনও সেখানে অ্যাম্বুলেন্সের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মধ্যরাত সোয়া একটা থেকে দুইটার দিকে একদল ভক্ত পুলিশের বাধা টপকে সঙ্গমস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। গঙ্গা, যমুনা ও কাল্পনিক স্বরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলকে পবিত্রতম স্থান বলে গণ্য করা হয়, যেখানে সবাই স্নান করতে চান। তারা বিশ্বাস করেন, এর ফলে তাদের সব পাপ ধুয়ে যাবে এবং তারা মুক্তি পাবেন।

বাংলাদেশ সময় সকাল নয়টার দিকে মাত্র পাঁচ মিনিটে ঘটনাস্থল থেকে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স বেরিয়েছেন। ঘণ্টা তিন-চারেক আগের পরিস্থিতিও ছিল অনেকটা এমনই। এদিন ভোর পাঁচটার দিকে মাত্র১৫ মিনিটের মাঝে অন্তত ২০টি অ্যাম্বুলেন্স বের হতে দেখা গেছে।

এদিকে এখনও হাজার হাজার মানুষ উৎসবে যোগ দিতে আসছেন। যদিও তাদের চোখে-মুখে উত্তেজনার ছাপ ছিল স্পষ্ট। বিভিন্ন চেকপয়েন্ট জুড়ে ছিল বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি।

অনেকেই বিবিসিকে বলেছিলেন যে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ হেঁটেছেন, কিন্তু বিভ্রান্তিকর নির্দেশনার কারণে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি।

সুনীল গোস্বামী ও রামজি কর নামক দুই ভক্ত বলছিলেন যে তারা প্রায় পুরো একদিন হেঁটেছেন, তবু তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি।

বেশ কয়েকটি চেকপয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে ভক্তদের তর্কাতর্কি হতে দেখা গেছে। এমনকি, একটি চেকপয়েন্টে এও দেখা গেছে যে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদেরই সহকর্মীদেরকে অনুরোধ করছেন, যাতে মানুষজন ব্যারিকেড পার হতে পারেন।

বুধবারের ওই ঘটনা ঘটেছে মূলত সঙ্গম নোজে। “সঙ্গম নোজ” বলতে সাধারণত সেই স্থানকে বোঝানো, যেখানে প্রয়াগরাজ শহরে তিনটি নদী – গঙ্গা, যমুনা এবং কাল্পনিক সরস্বতী – মিলিত হয়েছে। এসব নদীকে হিন্দু ধর্মবিশ্বাসীরা পবিত্র বলে মনে করেন। এই সঙ্গম নোজ-ই কুম্ভ মেলার প্রধান স্থান।

মেলার একজন কর্মকর্তা আকাঙ্খা রানা সাংবাদিকদের বলেন,”সঙ্গম নোজ এলাকায় একটি হুড়োহুড়ির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং কিছু ব্যারিকেডও ভেঙ্গে যায়। এই ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন, তবে গুরুতর নয়। এবং, তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন।”

এই সঙ্গম নোজ প্রয়াগরাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্নানস্থল। এই স্থানটি হিন্দু সাধুদের স্নানের জন্য নির্দিষ্ট এবং এটি ভক্তদের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়।

সেখানকার বিশাল জনসমাগম সামলাতে নদীর তীর পুনরুদ্ধার করে এলাকা সম্প্রসারণ করেছে। সেখানে এখন প্রতি ঘণ্টায় ৫০ হাজারের পরিবর্তে দুই লাখ মানুষ একসাথে স্নান করতে পারেন।

আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে বিবিসি সংবাদদাতা সামিরা হুসাইন ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন, এই জনবহরকে সামাল দিতে সঙ্গম নোজে এখন অনেক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে এবং মানুষ সেখানকার ব্যারিকেডের ওপর উঠে যাচ্ছে অথবা ভেঙ্গে দিচ্ছে।

বিবিসি সংবাদদাতা এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, নদীর তীর জুড়ে কেবলই বিশৃঙ্খলা।

সেখানে মানুষের ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিস, যেমন– কাপড়, কম্বল, জুতো, ব্যাকপ্যাক সব আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিলো।

সেখানে অনেককে নিস্তেজ অবস্থাতেও পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

সেখানে এমন এক নারীর দেখা পাওয়া গেছে, যিনি স্ট্রেচারের সামনে হাঁটছিলেন। তার চোখ ছিল অশ্রুসজল এবং স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছিলো যে তিনি শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন।

আরেকজন পুরুষকে দেখা গেছে যে তিনি স্ট্রেচারের পাশ দিয়ে হাঁটছেন এবং একটি মৃতদেহকে শাল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

এই যে পুরো ঘটনা, তা ঘটেছিলো মূল স্নানের জায়গায়। এখানের কর্মকর্তা জানতেন যে এই দিনে সেখানে একযোগে অনেক মানুষ একত্রিত হবে। তারপরও কেন এমন হল, সেটিই মূল প্রশ্ন।

এদিকে এই ঘটনায় ঠিক কতজন আহত বা নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে এদিন সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্তও কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভক্ত ও অনুরাগীদেরকে সঙ্গম নোজে স্নান করতে না যেতে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিবর্তে, তাদেরকে গঙ্গা ও যমুনা নদীর ধারে বিভিন্ন স্নানস্থলে স্নান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু মানুষ যেহেতু কারও কথা শুনছে না, তাই তাদেরকে এও অনুরোধ করা হয়েছে যে তারা যাতে সঙ্গম নোজে পৌঁছানোর জন্য পুলিশকে চাপ না দেন।

বিবিসি সংবাদদাতা বিকাশ পান্ডে এ দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন যে হাজার হাজার মানুষ এখনও সঙ্গম নোজে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

এই ধর্মীয় স্নানে ছাই মাখা সাধু-সন্ন্যাসীদের সঙ্গমে এসে রঙিন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্নান করতে দেখা যায়। অনেকেই নানা প্রান্ত থেকে এই সাধুদের আশীর্বাদ নিতে আসেন।

প্রয়াগরাজে, পূর্বের এলাহাবাদে, এর আগেও কুম্ভ মেলাকে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। সর্বশেষ ২০১৩ সালে প্রয়াগরাজ রেলওয়ে স্টেশনে ৩০ জন তীর্থযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

সর্বশেষ

নির্বাচিত

Stay in touch

To be updated with all the latest news, offers and special announcements.