১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে দিনটি উদযাপন করে মানুষ। ক্যাথলিক চার্চের শুরুর দিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস নামে এক বা একাধিক পাদ্রির শহীদ হওয়াকে সম্মান জানাতে খ্রিষ্টধর্মীয় উৎসব হিসেবে দিনটি পালন হতো। সময়ের সঙ্গে প্রেম ও ভালোবাসার সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক একটি আনুষ্ঠানিক দিবসে এটি পরিণত হয়।
ভালোবাসা দিবস প্রতিষ্ঠা নিয়ে আছে নানা মিথ। এসবের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বেশি পেয়েছে তৃতীয় শতকে এক পাদ্রির শহীদ হওয়ার ঘটনা।
তখন রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছেন তারা। যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে পরাজিত করতে সেনাবাহিনীকে আরও বড় করার কথা ভাবলেন সম্রাট।
ওই সময়ে তরুণরা যুদ্ধের দামামার প্রতি অনাগ্রহী। ক্লডিয়াস ভাবলেন, সঙ্গী না থাকলেই যুদ্ধমুখী হবে তারুণ্য। তাই নিষিদ্ধ করলেন বিয়ে। তারুণ্যকে নিয়মের বেড়াজালে বন্দি করার কাজটিও তো মুশকিলের। সম্রাটের চোখ ফাঁকি দিয়ে তরুণদের পাশে দাঁড়ালেন এক পাদ্রি, নাম সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন।
গোপনে তিনি বিয়ে দিচ্ছিলেন তরুণ-তরুণীদের। কিন্তু সম্রাটের চোখকে বেশি দিন ফাঁকি দিতে পারলেন না। ধরা পড়লেন ভ্যালেন্টাইন। শুরু হলো কারাজীবন।
মুক্তির পথ জানা না থাকলেও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে জেলখানায় যেতেন তরুণরা। ভ্যালেন্টাইনের প্রজ্ঞায় মুগ্ধ ছিলেন এক তরুণী। বলা হয়ে থাকে সেই তরুণী ছিলেন কারারক্ষীর মেয়ে।
প্রায়ই সে বন্দি ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে কারাগারে যেতেন। ধর্মযাজক হয়েও এক সময় রীতিনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই তরুণীর প্রেমে মজেন ভ্যালেন্টাইন। এসব ভ্যালেন্টাইনের জীবনের শেষ সপ্তাহগুলোর ঘটনা। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইন প্রেয়সীকে চিঠি লেখেন তিনি। যার শেষ বাক্যটা ছিল, ‘তোমার ভ্যালেন্টাইনের কাছ থেকে ভালোবাসা।’
সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন। যদিও দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে দিনটি। অবশেষে ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের রাজা পোপ জেলুসিয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে ঘোষণা করেন।
সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত জুনো উৎসব। রোমান পুরাণের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনো। দিনটিতে অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত।
৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে, তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে গাথা হয় সূত্রে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
ভ্যালেন্টাইন ডের শুরু নিয়ে আরেকটি মিথ বেশ আলোচিত। এই মতের মানুষরা মনে করেন ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে প্রিয়জনকে ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার অনেকে বলেন, মধ্যযুগের শেষ দিকে মানুষ বিশ্বাস করত, এদিনে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। তাদের দেখাদেখি মানুষও সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে।