১৯৮১ সালের পর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯৮৩ সালে পর থেকে কোনো ইউরোপিয়ান ফাইনালে হারেনি তারা। ২০২৪ সালে এসেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পারলো না বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। পারলেন না করিম আদিয়েমি, জেডন সাঞ্চো আর এদিন টারজিকরা। লন্ডনে আরও একবার রিয়াল মাদ্রিদ প্রমাণ করলো কেনো তারাই ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাজা। দ্বিতীয়ার্ধের দুর্দান্ত ফুটবলে ডর্টমুন্ডকে ছিটকে দিয়ে রেকর্ড ১৫তম বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করল লস ব্লাঙ্কোসরা।
প্রথমার্ধের নাজুক পারফরম্যান্সের পর দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ফিরে এসেছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। ৯ মিনিটের ব্যবধানে তুলে নিয়েছে দুই গোল। দানি কার্ভাহাল এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের গোলে ২-০ গোলে ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করল রিয়াল মাদ্রিদ। তিন বছরের ব্যবধানে এটি তাদের দ্বিতীয় শিরোপা। ২০২২ সালে প্যারিসে জয় করেছিল লিভারপুলের বিপক্ষে। মাঝে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে শিরোপা হারালেও, ২০২৪ সালে ঠিকই পুনরায় শিরোপা ঘরে তুলছে তারা।
অথচ প্রথমার্ধে অন্তত তিন গোলের লিড নিতে পারত বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। গোলমিসের মহড়ায় নিজেদের কপাল পুড়িয়েছে নিজেরাই। ম্যাচশেষে নিশ্চিতভাবেই সেই আক্ষেপটাই বড় হয়ে থাকবে করিম আদিয়েমি, হুলিয়ান ব্রান্টদের।
ফাইনালের শুরু থেকেই দুই দল খেলেছে সাবধানী ফুটবল। অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখা যায়নি কারো দিক থেকেই। যদিও নিজেদের বিখ্যাত ইয়েলো ওয়ালের সামনে বলেই কি না ডর্টমুন্ডকে খানিকটা উজ্জীবিত দেখা গেল শুরুতেই। বল দখলের লড়াইয়ে অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদই আধিপত্য দেখিয়েছে। প্রথমার্ধে ৬৩ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল আনচেলত্তি শিষ্যরা। তবে গোলমুখে নিতে পারেনি কোনো শট। বিপরীতে গোলমুখে একের পর এক আক্রমণ করেছে ডর্টমুন্ড। যদিও শেষপর্যন্ত বল আর জালে জড়ানো হয়নি তাদের।
প্রথমার্ধের ১৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক সুযোগ মিস করেন ডর্টমুন্ডের হুলিয়ান ব্রান্ট। নিকলাস ফুলক্রুগের ব্যাকপাস রিসিভ করেন ডিবক্সের প্রান্তে থেকে। ভেতরে গেলেও ভারসাম্য হারান খানিকটা। দুর্বল শটটা পোস্টে রাখলে পারলে লিডই পেয়ে যেতে পারত ডর্টমুন্ড। ২০ মিনিটের মাথায় আরও বড় সুযোগ মিস করে বসেন ডর্টমুন্ডের করিম আদেয়েমি। গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে একা পেয়েও বল পোস্টে রাখতে পারেননি। মিনিট তিনেক পরেই ফুলক্রুগের পা ছোঁয়া শট ফিরে আসে গোলবার থেকে। যদিও সেটা গোল হলে অফসাইডের ফাঁদে পড়ত কিনা, সেটাও বড় প্রশ্ন।
রিয়াল যে একেবারেই সুযোগ পায়নি তা না। তবে ফেডে ভালভার্দে এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র দুজনেই সুযোগ পেয়ে বল পোস্টেই রাখতে পারেননি। সেটাও অবশ্য ২০ মিনিটের আগে। শেষদিকে খানিকটা শারীরিক শক্তি দেখিয়েছে দুই দল। রিয়ালের ভিনিসিয়ুস আর ডর্টমুন্ডের স্লটারব্যাক দেখেছেন হলুদ কার্ড।
৪০ মিনিটে আবারও ডর্টমুন্ড কাঁপন ধরায় রিয়ালের রক্ষণে। মার্সেল সাবিটজারের মাটি কামড়ানো সেই দুরপাল্লার শট অবশ্য ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য অবস্থায় টানেলে ফেরে দুই দল।
প্রথমার্ধের নাজুক পারফরম্যান্সের পরেই যেন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা রিয়াল মাদ্রিদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বহুবারই চাপের মুখে থেকে নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিয়েছে তারা। ওয়েম্বলিতে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ফাইনালেও ঠিক সেটাই করে দেখাল আরেকবার। বিরতি থেকে ফেরার পর দশ মিনিটের মাথায় অন্তত তিনবার প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা।
ম্যাচের ৪৬ মিনিটেই ভিনিসিয়ুসকে ডিবক্সের বাইরে ফাউল করেন মাটস হুমেলস। ফ্রিকিক নেন রিয়ালের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নামা টনি ক্রুস। টপ কর্নারে তার নেয়া দুর্দান্ত ফ্রিকিক দক্ষতার সাথে ফিরিয়ে দেন ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক কোবেল। এরপরেই কর্নার থেকে দারুণ হেড করেন দানি কার্ভাহাল। তবে তা চলে যায় গোলবারের ওপর দিয়ে।
ফাইনালে রিয়ালের লিড
শেষ পর্যন্ত কার্ভাহালই লিড এনে দিলেন ফাইনালের বড় মঞ্চে। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকেই পাওয়া বলে দারুণ এক হেডে বল জালে জড়ান কার্ভাহাল। ফাইনালের ১৭ মিনিট বাকি থাকতে লিড পায় রিয়াল মাদ্রিদ। নিজেদের নাজুক অবস্থা থেকে বারবার ফিরে আসার অবিশ্বাস্য মানসিকতাই যেন আবার প্রমাণ করেছেন এই স্প্যানিশ রাইটব্যাক।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে শেষবারের মতো বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জার্সিতে মাঠে নামেন মার্কো রয়েস। এদিন টেরজিক দুই পরিবর্তন এনেছিলেন। কিন্তু এই আক্রমণাত্মক মনোভাবই কাল হয়ে দাঁড়ায় জার্মান ক্লাবটির জন্য। ফাঁকা রক্ষণের সুযোগ নিয়ে ম্যাচে নিজেদের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।
কার্ভাহালের গোলের ঠিক ৯ মিনিট পরেই ডর্টমুন্ডের জালে বল জড়ান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ফর্মের তুঙ্গে থাকা এই ব্রাজিলিয়ান ফাঁকায় পেয়ে যান বল। আলতো এক শটে কোবেলকে পরাস্ত করেন তিনি। বেলিংহ্যামের অসাধারণ পাস থেকে গোল করতে কোনো ভুলই করেননি তিনি। ২-০ গোলের লিডে নিজেদের ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার আরও কাছে চলে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।
ম্যাচের ৮৭ মিনিটে একটা গোল অবশ্য শোধ করে ডর্টমুন্ড। তবে নিকলাস ফুলক্রুগের হেডে করা সেই গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয়েই নিজেদের ১৫তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে রিয়াল মাদ্রিদ।