হিসাবের খেরো খাতায় পেরিয়েছে দেড় যুগেরও বেশি সময়। নিউজিল্যান্ডে সাদা বলের ক্রিকেটে এখনও অধরা বাংলাদেশের জয়। ২০০৭ সাল থেকে ব্ল্যাক ক্যাপসদের দুর্গে ২৬টি (১৭ ওয়ান ডে ও ৯ টি-টোযেন্টি) রঙিন পোশাকের ম্যাচে কোনো জয় নেই টাইগারদের। কিউই মুলুকে টেস্টের মলিন পরিসংখ্যান মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে থামলেও গত ১৬ বছরে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে ক্রিকেটে রঙহীন বাংলাদেশ।
হারের বৃত্তবন্দি দশা থেকে বেরিয়ে আসার চ্যালেঞ্জে বুধবার ভোরে নেলসনে নামবে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথম ম্যাচ হারায় এই ম্যাচটি এখন নাজমুল হোসেন শান্তদের জন্য টিকে থাকার চ্যালেঞ্জও। তাপ ছড়ানো এই ম্যাচটি শুরু হবে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে ৪৪ রানে হেরে সিরিজে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তাতে বহাল থাকে কিউই মুলুকে স্বাগতিকদের বিপক্ষে হারের ধারা। ডানেডিনে রবিবার তিন দফায় বৃষ্টিতে বিঘ্ন হওয়া প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ নেমে আসে ৩০ ওভারে। নিউজিল্যান্ড তোলে ৭ উইকেটে ২৩৯ রান। ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫। টি-টোয়েন্টি মেজাজে পরিণত হওয়া ম্যাচে শান্তরা যেতে পারেন ২০০ পর্যন্ত।
বড় হারে সিরিজ শুরু করলেও ফিরতে আত্মবিশ্বাসী এনামুল হক বিজয়। সিরিজে পিছিয়ে পড়ার দিনে বিজয় শুনিয়েছিলেন আশার কথা, ‘সুযোগ পেলে রান বড় করার চেষ্টা করতে হবে। একই শিক্ষা অন্য ব্যাটারদেরও। হয়তো লিটন সেট হবে, শান্ত সেট হবে কিংবা সৌম্য সেট হবে, তারা যদি সুযোগটা পায় তাহলে যেন ইনিংস বড় করতে পারে। আশা করছি পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারব খুব তাড়াতাড়ি। আমাদের কামব্যাক করার সুযোগ আছে।’ বাংলাদেশের অধিনায়ক শান্ত সিরিজ শুরুর আগে দেখিয়েছিলেন বড় স্বপ্ন। তারুণ্যনির্ভর দলের নেতা বলেছিলেন, ‘দল হিসেবে সিরিজ জিততে চাই। আমাদের দলটা বেশ ভালো। গত বছর এখানে আমরা একটি টেস্ট জিতেছি। এবার আমাদের লক্ষ্য এই দুই সিরিজ জেতা। যদি জিততে পারি, আমাদের দলের জন্য দারুণ হবে।’
শান্তদের সেই লক্ষ্যে এগোতে গেলে বুধবার জিততেই হবে। বৈরী আবহাওয়ায় খেলা ডানেডিনের মতো টি-টোয়েন্টিতে পরিণত হওয়ার সুযোগ যদিও নেলসনে নেই। তবে কিউইদের গতি সামলে রান করতে হবে শান্ত-সৌম্যদের। প্রথম ওয়ানডে থেকে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিংয়ের দিকে নজর বাড়াতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেক্ষেত্রে দলে একটি বদল আসার সম্ভাবনা আছে। জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের দিনে সৌম্য বল হাতে খরুচে ছিলেন, ছেড়েছেন ক্যাচ, ব্যাটিংয়ে আউট হয়েছেন শূন্য রানে। তবুও তাকে আরেকটি সুযোগ দিতে পারে দল। কিউই দলে স্কোয়াড থেকে কাইল জেমিসন ও ফিন অ্যালেন ছুটি পেলেও একাদশে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম।
সিরিজে এগিয়ে থাকা কিউইরা তবুও সতর্ক। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের নায়ক উইল ইয়াং মনে করছেন সিরিজে ফেরার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চটা করবে বাংলাদেশ, ‘আসলে কাজটা (ব্যাটিং) অনেক কঠিন। কিছু জুটিতে বাংলাদেশকে অনেক ভয়ংকর মনে হয়েছে। উপমহাদেশের অনেক দেশের জন্য নিউজিল্যান্ডে এসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ থাকে বাউন্স সামলানো। তবে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ এসব ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করবে এবং পরের ম্যাচে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতে চাইবে। খুবই উত্তেজনাপূর্ণ একটি সিরিজ হবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।’
সেই উত্তেজনাপূর্ণ সিরিজের শেষটা নেলসন ছাপিয়ে নেপিয়ারেও পড়ুক, এমনটিই চাইবে শান্ত-মিরাজরা। সেই লক্ষ্যে কিউই মুলুকে টাইগারদের দুটো চ্যালেঞ্জ—রঙিন পোশাকে নিউজিল্যান্ডে ইতিহাস গড়ার এবং পিছিয়ে পড়া সিরিজে সমতায় ফেরা।